প্রায় অনেক বছর আগের কথা। মধ্য হাওড়ার শ্যামাশ্রী সিনেমা অঞ্চল তখন বন জঙ্গলে ঘেরা। জঙ্গল সংলগ্ন এলাকাতে সাধারণ মানুষ বসবাস করত। শ্রী সুরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নামে একজন ব্যাক্তি একদিন রাত্রে স্বপ্ন পেলেন মা শীতলা তাঁকে বলছেন “আমি আসছি তোর ঘরে”, স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি বিচলিত হয়ে উঠলেন কিন্তু তৎক্ষণাৎ কাউকে কিছু বললেন না। পরের দিন সকালে তিনি তাঁর স্ত্রীকে বিষয়টি জানান, স্বপ্নের ব্যাপারে শুনে তিনিও ভীষণ অবাক হয়ে যান, কি করবেন বুঝতে পারেন না তারা, এভাবেই সেই দিনটা কেটে যায়। কিছু দিন পর একদিন সকালে স্নানের উদ্যেশ্য তিনি পুকুরে যান। পুকুরে স্নান করতে নেমে তিনি গায়ে কিছু ভারী ভারী অনুভব করলে প্রতিবেশীদের তৎক্ষণাৎ ডাকেন। সুরেন্দ্রনাথ কে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন বেশ কিছু লোক। ইতিমধ্যেই এই খবর চলে যায় স্থানীয় জমিদার এর কাছে। তৎক্ষণাৎ লোক লস্কর নিয়ে পুকুর পাড়ে হাজির হন জমিদার শ্রী মনীন্দ্র নারায়ণ দাস সাঁতরা। বেশ কিছু সময় পরে ভারী বস্তুটি পুকুরপাড়ে নিয়ে তোলা হলে দেখা যায় যে সেটি মা শীতলার অষ্টধাতুর মূর্তি। মায়ের এমন মূর্তি দেখে সবাই মোহিত হয়ে যায়। দয়ালু ও ভক্তিপ্রবণ জমিদার মনীন্দ্র নারায়ণ সিদ্ধান্ত নেন সেখানেই মায়ের মন্দির গড়ে তোলা হবে এবং সেই কথা মতো তিনি মন্দির গড়ে তোলেন। মন্দিরের দায়িত্বভার ও কতৃত্ব তিনি শ্রী সুরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে অর্পণ করেন। এরপর থেকে প্রতিবছর অক্ষয়তৃতীয়ার পরের শনিবার মায়ের বাৎসরিক পূজা ঠান্ডা উপোস শুরু হলো। ছাগবলি প্রথাও শুরু হলো বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠানে। এরপর বংশধর সূত্রে শ্রী সুরেন্দ্রনাথের পুত্র শ্রী রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মন্দিরের দায়িত্বভার পেলেন। তাঁর সময়কালে মায়ের মহিমা চারিদিকে আরো প্রচলিত হলো, বসন্তরোগ ও নানারকম সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বহুলোকজন দুর দুর থেকে মায়ের কাছে ছুটে আসত। এরপর রবীন্দ্রনাথের পুত্র শ্রী নিত্যানন্দ চক্রবর্তীর আমলে মন্দিরের বহু সংস্করণ করা হয়। তবে ছাগবলি প্রথায় একটি বাধার কারণে বলিপ্রথা বন্ধ করে দেওয়া হলো। বর্তমানে শ্রী নিত্যানন্দর পুত্র শ্রী শম্ভু চক্রবর্তী মন্দির কতৃত্বে আছেন। ২০০৯ সাল নাগাদ ভক্তদের প্রচেষ্টায় মায়ের মন্দির পুনর্সংস্করণ ও মায়ের ঘটটির নব কলেবর করা হয়। তবে বর্তমানে মায়ের পুকুরটি আর নেই। বছরের পর বছর ধরে মা এখানে বিরাজমান। শোনা যায়, মা এখানে ভক্তদের খালি হাতে ফেরান না, প্রত্যেকের মনস্কামনা পূর্ণ করেন তিনি। মানুষের দুঃখে কষ্টে তিনিও কষ্ট পান আবার আনন্দের মুহূর্তে তিনি হেসেও ওঠেন। মায়ের মুখে এমন পরিবর্তন অনেক ভক্তই লক্ষ্য করেছেন। মায়ের শান্তির জলের স্পর্শে বসন্তরোগের জ্বালা যন্ত্রণা নিমেষেই কমে যায়। মায়ের শান্ত অপরুপ মুখখানি দেখলে সমস্ত কষ্ট বেদনা হৃদয় থেকে মুছে যায়। মা সকল কে দু হাত ভোরে আশীর্বাদ করেন।
source – Facebook
