Bharat RitualsBharat RitualsBharat Rituals
  • ভারতীয় প্রথা
    • ভারতীয় প্রথা
    • ভুল-ভ্রান্তি
    • উৎসব
    • দিনকাল, অনুষ্ঠান ও ঘটনা
  • শাস্ত্রে বিজ্ঞান
  • মন্দির ও পীঠস্থান
  • পূজা অর্চনা
    • দেব-দেবী
    • পূজা অর্চনা
    • পূজার মন্ত্র
  • অন্যান্য
    • মাইথোলজি
    • মহাপুরুষ
    • শ্লোক ও উক্তি
Search
© 2023 Bharat Rituals. Content are collected from scriptures and internet.
Reading: সত্য নারায়ণের পাঁচালী / সত্য নারায়ণ পূজার নিয়ম ও উপকরণ
Share
Sign In
0

No products in the cart.

Notification
Font ResizerAa
Bharat RitualsBharat Rituals
0
Font ResizerAa
Search
  • ভারতীয় প্রথা
    • ভারতীয় প্রথা
    • ভুল-ভ্রান্তি
    • উৎসব
    • দিনকাল, অনুষ্ঠান ও ঘটনা
  • শাস্ত্রে বিজ্ঞান
  • মন্দির ও পীঠস্থান
  • পূজা অর্চনা
    • দেব-দেবী
    • পূজা অর্চনা
    • পূজার মন্ত্র
  • অন্যান্য
    • মাইথোলজি
    • মহাপুরুষ
    • শ্লোক ও উক্তি
Have an existing account? Sign In
Follow US
© 2022 Foxiz News Network. Ruby Design Company. All Rights Reserved.
Bharat Rituals > All Posts > পূজা অর্চনা > সত্য নারায়ণের পাঁচালী / সত্য নারায়ণ পূজার নিয়ম ও উপকরণ
পূজা অর্চনা

সত্য নারায়ণের পাঁচালী / সত্য নারায়ণ পূজার নিয়ম ও উপকরণ

Bharat Rituals Editor
Last updated: August 17, 2022 12:01 PM
Bharat Rituals Editor 2.7k Views
Share
16 Min Read
SHARE

গ্রন্থারম্ভ

দ্বাপরের শেষ ভাগে রাজা যুধিষ্ঠির।
কলি প্রাদুর্ভাব দেখে হলেন অস্থির।।
একদিন শ্রীকৃষ্ণকে করে জিজ্ঞাসন।
কলির প্রভাব হতে কিসে পাবে ত্রান।।
শ্রীকৃষ্ণ কহেন শুন কহি সে বিস্তর।
জীব লাগি যুগে যুগে মোর অবতার।।
লক্ষগুণ পূণ্য কেহ সত্য যোগে করে।
ত্রেতার অযুত গুণ সমফল ধরে।।
দ্বাপরে শতেক গুণ সু-কৃৎ কলিতে।
যদিও ভীষণ কলি সহজ তরিতে।।
কলি আরম্ভের পাঁচ হাজার বৎসরে।।
অবতীর্ণ হব আমি অবন্তি নগরে।।
স্বর্গ বাসে যাবে তোক আমার কৃপায়।
হরিনাম অগ্নি সম কলি তুল্য প্রায়।।।
কলি অন্তে এক বর্ণ হইবে যখন।

কল্কি অবতারে তাহে করিব নিধন।।
এত শুনি যুধিষ্ঠির গোবিন্দ ভাবিয়া।।
শরীরে স্বর্গপুরে গেলেন চলিয়া।।
অবন্তী নগরে অতঃপর নারায়ণ।
সত্যনারায়ণ নামে অবতীর্ণ হন।।
সন্ন্যাসী বেশে প্রভু সত্যনারায়ণ।
ভিক্ষুক ব্রাহ্মণে এক দেন দরশন।।
একদিন সেই দ্বিজ সত্যনারায়ণে।
সন্ন্যাসীর বেশে ডাকি কহেন ব্রাহ্মণে।।
কোথায় কি হেতু দ্বিজ করেছ গমন।
প্রণাম করিয়া দ্বিজ কহে বিবরণ।।
দরিদ্র ব্রাহ্মণ আমি অবন্তীতে বাস।
কর্মদোষে দরিদ্রতা আসে ভিক্ষা আশ ।।
ভিক্ষা করি দেড় সের লয়ে যাই ঘরে।
দিনে লাগে দুই সের পেট নাহি ভরে।।
এত শুনি দয়া করি বলে নারায়ণ।।
শুনি দ্বিজ আমি হই সত্যনারায়ণ।।
আমারে পূজিলে হয় দুঃখ অবসান।
যাগ যজ্ঞ টাকা কড়ি নাহি প্রয়ো জন।।
ভক্তিতে ভজনে পূর্ণ হয় সর্বআশ।
অভক্তি করিলে তার হয় সর্বনাশ।।
দ্বিজ বলে নিজরূপ দেখাও আমারে।
তবে প্রতি মম হইবে অচিরে।।
নিজরূপ ধরিলেন দেব নারায়ণ।
পূর্বাজিত কর্মফলে দেখিল ব্রাহ্মণ।
ব্রহ্মা আদি দেব যারে ধ্যানে নাহি পায়।।
কমলা সেবিত পদ দেখিল দয়ায় ।
শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম চতুভূজধারী।।
পরিধান পিতাম্বর যাই বলি হারী।।
কুন্ডল কর্ণেতে আর শিখি পুচ্চচূড়ে।
মকরন্দ লোভেকত মধুকর উড়ে।।
অঙ্গের ভূষণ কত শোভে নানা মতে।
দেখি অচেতন দ্বিজ পড়িল ভূমিতে।।
চেতনা পাইয়া দ্বিজ লোটায়ে চরণে।
বলে প্রভু দেখা মোরে দিলে কেন শুলে।।
দয়া করে কন তারে সত্যনারায়ণ।
অবতীর্ণ অবনীতে জীবের কারণ।।
কলির কলুষ রাশি বিনাশ করিতে।
সত্যনারায়ণ রূপ প্রকাশি জগতে।।
যাগ যজ্ঞ ক্রিয়া হীন ঘোর কলিকাল।।
আমাকে পূজিতে নাহি কিছুই জঞ্জাল।।
দিব্যপীঠে শুভ্র বস্ত্র করি আচ্ছাদন।।
পুষ্প মাল্য দিয়া তাহে করিবে রচন।
রাখিবে গুবাক পান চতুর্দিকে তার।
ধুপ দীপ নৈবৈদ্যাদি অনেক প্রকার।।
সোয়া করিয়া নানা, দ্রব্যাদি দিবে।
দুগ্ধ চিনি আটা আনি তাতে মিশাইবে।।
জ্ঞাতি বন্ধু সহযোগে মনোযোগ দিয়া।
পূজা কিংবা ভক্তি ভরে পাঁচালী শুনিয়া।।
প্রসাদ লইয়া সাধু অন্তরে করিবে।
অশান্তি অরিষ্ট ব্যাধি সবই ঘুচিবে।।
এত বলি সত্যদেব হন অদর্শন।
আনন্দে গেলেন দ্বিজ ভিক্ষার কারণ।।
সেইদিন ভিক্ষা প্রচুর পাইল।
গৃহে ফিরি ব্রাহ্মণীকে বার্তা সব দিল।।
ভিক্ষালবধ জিনিসের অগ্রভাগ দিয়া।
সত্যনারায়ণ পূজে ভকতি করিয়া।।
সেই মত আজ্ঞা পেল প্রভু নারায়ণ।
নিত্য সেই মত করি পূজিল ব্রাহ্মণ।।
ধনে জনে সম্পদে বাড়িল বহুতর।
সেই দেশের রাজা হৈল এই দ্বিজবর।।
একদিন কাষ্ঠ বেচি কাঠুরিয়া গণ।
তৃষ্ণাযুক্ত হয়ে যায় দ্বিজের ভবন।।
অশ্ব, গজ পদাতিক ঐশ্বর্য দেখিল।
দুঃখী দ্বিজ রাজা দেখি বিস্মৃতি হইল।।
দেখে সত্যনারায়ণে পূজিছে ব্রাহ্মণ।
তারা সবে দেখি পূজা করিল গমন।।
প্রসাদ লইয়া যায় কাষ্ঠ বেচিবারে।
চতুর্গুণ লভ্য তারা করিল সত্বরে।।
পূজার সামগ্রী আনি কাঠুরিয়া গণ।
ভক্তি ভরে সত্যদেবে সতত পূজয়।।

কাঠুরিয়া নদীতীরে পূজে নানা মতে।
ধনেশ্বর সওদাগর যায় সেই পথে।।
গৌড়েতে বসতি তার ডিঙ্গা বেয়ে যায়।
বাণিজ্য করিছে সাধু এথায় সেথায়।।
পূজা দেখি ডিঙ্গা রাখি উঠি তট দেশে।
কাঠুরিয়াগণে কহে সু-মধুর ভাষে।।
কার পূজা করিতেছ কিবা ফল তার।
কাঠুরিয়াগণে তারে কহিল বিস্তার।।
সাধু বলে মোর নাহি কোন দুঃখ।
একমাত্র সন্তানের দেখি নাই মুখ।।
পুত্র কিম্বা কন্যা এক যদি মোর হয়।
হাজার টাকার ভোগ মানিনু নিশ্চয়।।
কামনা করিয়া সাধু লইল প্রসাদ।
গৃহে গিয়া অবিলম্বে ঘুচিল বিষাদ।।
কন্যা এক জনমিল নারায়ণের বরে।
শশীকলা সমকন্যা দিনে দিনে বাড়ে।
ক্রমেতে বিবাহ কাল হইল উপনীত।
জামাতা আনিতে সাধু হলেন বিব্রত।।
রূপে গুনে চন্দ্র কেতু ছিল সওদাগর।
বিবাহ দিলেন কন্য করি সমাদর।।
অল্পকালে তাহার বিয়োগ হল মাতা পিতা।
পুত্র-বৎ নিজগৃহে রাখিল জামাতা।।
তবে কত দিনে সাধু বাণিজ্যেতে যাইয়া।
নানা দ্রব্য পুরি সপ্ত ডিঙ্গা সাজাইয়া।।
জামাতা সহিত যায় বাহি ভাগিরথী।
সত্যনারায়ণ পূজা হইল বিস্মৃতি।।
দৈবের নির্বন্ধ কেবা করয়ে খন্ডন।
অতঃপর যা হইল শুন তার বিবরণ।।

ত্রিপদী

নদ-নদী অতিক্রম               ডিঙ্গাবেয়ে দিবানিশি
আসিলেন সুরথ বন্দর।
রাজ ভেট দিয়া নানা,              করে কথা বেচা কিনা,
রজত কাঞ্চন বহুতর।।
সূৰ্য্য চন্দ্র কান্তমনি,           মতিহীরা লাল চুণী,
প্রবাল পরশ শিলাকত।
শঙ্খ চূনি গজমতি,        কস্তুরী চামর ইতি
রেশমী ও পশমী বনাও।।
অগুরু চুয়া চন্দন।       নানা দ্রব্যে সম্মোহন
ডিঙ্গা ভরি লইলেক কিনে।।
হেথায় রাজার পূরে         চোরে দ্রব্য চুরি করে,
সস্তায় বেচিল সাধু স্থানে।।
অল্প মূল্য বহুধন,           কিনে আনন্দিত মন।
কেবা জানে ঘটিবে প্রমাদ।।
আমোদ আহলাদে মাতি;          সুখে মত্ত দিবারাতি।
হেন কালে ঘটিল বিষাদ।।
ডাকি কহে মহিপাল,          শুন নরে কোটাল,
অকাতরে পড়ি নিদ্রা যাও।।
চোর ঢুকে রাজপুরে,           বহু দ্রব্য চুরি করে।
শীঘ্রচোর ধরি আনি দাও।
কোটাল ঘুরিছে তবে,               হেন কালে সত্য দেবে।
ভিক্ষুকের ছলে কহে তারে।।
ধর সাধু সওদাগরে।            পাবে দ্রব্য তথাকারে
শুনিয়া কোটালে ডিঙ্গা ধরে।
রাজার কন্ঠ হার                 গলে সাধু জামাতার ।
দেখিয়া কুপিল ভয়ঙ্কর।।।
সাধু আর জামাতারে             রাখে দোহে কারাগারে
ক্রমান্বয়ে দ্বাদশ বৎসর।।

পয়ার

হেথায় বহুদিন হয় সাধুর রমনী
কন্যা সহ আকুলিতা দিবস রজনী।।
গৃহদাহে সর্বস্বান্ত হয়ে অতিশয়।
বহু কষ্টে কাটে কাল নগরে ভ্রময়।।
একদা দেখিল গ্রামে সাধুরে দুহিতা।
সত্যনারায়ণের পূজা যতেক বর্ণিতা।।
মানস করিলা মনে পিতা পতি তার।
গৃহে যদি ফিরে পূজি সত্য-দেবতায়।।
গৃহে আসি জননীরে বলিলা সকল।
এক মনে নারায়ণে পূজে অবিকল।।
ভক্তিতে করিল দয়া সত্য দেবতায়।
স্বপ্ন ছলে আজ্ঞা করে সুরথ রাজায়।।
আমার কিংকর দুই সাধু সদাগরে।
কারাগার হতে দোঁহে ছাড়হ সত্বরে।
আপনার মঙ্গল যদি রাজা তুমি চাও।
ধন-রত্ন ডিঙ্গা সব ছেড়ে তারে দাও।।
স্বপ্ন ভেঙ্গে নৃপতির হল বড় ভয়।
দুই সাধু স্থানে তবে করজোড়ে কয়।।
ক্ষমা কর সদাগর না জানি বিশেষ।

লহ ডিঙ্গা, লহ ধন, যাও নিজ দেশে।
সাধু কহে নৃপবর তব দোষ নাই।
কর্ম দোষে ভুগিলাম এবে মোরা যাই।
এই বলি ডিঙ্গা খুলি সাধু চলে যায়।
সত্যদেব ছল করি জিজ্ঞাসে তাহায়।
কোথা যাও সওদাগর যাও কি লইয়া।
আমি ব্রাহ্মণ ভিক্ষা দাও তো ফেলিয়া।।
সাধু বলে লয়ে যাও লতাপাতা সবে।
ব্রাহ্মণ রোষিয়া বলে হৌক তাই তবে।
দেখিতে দেখিতে ধন সব হল লতা পাতা।।
ডিঙ্গা ভরি গেছে তার বহু লতাপাতায়।।
ধন না দেখিয়া সাধু জলে ঝাপ দিল।
চড়া হেতু প্রাণে সেই মরিতে নারিল।।
জামাতা লয়ে যায় ব্রাহ্মণের কাছে।
দোঁহে মিলি ব্রাহ্মণের পদে ধরি আছে।।
তবে সত্যনারায়ণ দয়াবান হয়ে।
ধনপূর্ণ কর ডিঙ্গা রোষ তেয়াগিয়ে।।
“অসত্যের লাগি মানি সহস্রেক টাকা।
আনি সত্যনারায়ণ ভূলিয়াছ পূজা”।।
তাই দোঁহে বার বর্ষ রাজপুরে সাজা।
এত বলি প্রভু যদি হল অন্তর্ধান।
সহস্র সুবর্ণ তোড়া বাধিল তখন।
দেশে আমি পূজা দিব মানস করিয়া ।।
তাড়াতাড়ি উপনীত হল দেশে গিয়া।
সংবাদ শুনিল সবে সাধুর দুহিতা।।
প্রসাদ মাটিতে ফেলি খাইল সৰ্ব্বথা।
সত্যনারায়ণ পুনঃ ক্রোধান্ধ হইয়ে।
চন্দ্রকেতু সাগরে ফেলিল ডুবায়ে ।।
জামাতা শশাকেতে আর সাধুর বর্ণিতা।
নন্দিনী সহিত কাঁদে ক্ষণেক মুচ্ছিতা।।

দীর্ঘ ত্রিপদী

হায় হায় মরি মরি                  কোথা যাই কিবা করি,
কাঁদে বামা সাধুর নন্দিনী।
কিবা মোর কর্ম ফল              পেলাম কত প্রতিফল
কেন নাহি যায় মোর প্রাণ।
পিতা মাতা প্রতি কহে              কিবা কাজ এই দেহে
পতি যথা যায় সেই স্থানে।
এতবলি সাধু সুতা।             হতে যায় অনুমৃতা
হেনকালে দৈব বাণী শুণে।।
পতির আনন্দে মেতে            প্রসাদ ফেলে ভূমিতে
এখন যে চাও মরিবারে।
পতির জীবন পাবে             প্রসাদ তুলিয়া খাবে
তারপর পূজো ভক্তি ভরে।।
মুক্ত কেশী হয়ে ধায়                  প্রসাদ মাটিতে পায়।
খাইলেক মৃত্তিকা সহিতে।
সত্যদেব দয়া হেতু               গদাধর চন্দ্র কেতু
ডিঙ্গা ভেসে উঠে আচম্বিতে ।।

পয়ার

সওদাগর উল্লাসিত জামাতা পাইয়া।।
অঙ্গনা সকলে উঠে জয়ধ্বনি দিয়া।।
আম্রশাখা সারি সারি রম্ভা শত শত।
পূর্ণ কুম্ভ দিয়া করে মঙ্গল বিহিত।।
আনন্দে পুরিত মন হল সবাকার।
শকটে পুরিয়া ধন নিল নিজাগার।।
ভাঙ্গিয়া সহস্র তংকা সন্ধ্যাকালে সবে।
নানা বিধ ভোগদ্রব্যে পূজে সত্যদেবে।
সোয়াভাগ আটা চিনি দুধ আনি দিল।
তাম্বুলাদি দিয়া শেষে পাঁচালী শুনিল।
এইরূপে পূজিয়া নিত্য সত্যনারায়ণে।
রাজ্যপেল সদাগর তার কৃপাগুণে।।
অন্তকালে পত্নী সহ স্বর্গ পুরে পুরে যায়।
দেখি শুনি সত্যদেব পূজিল সবায়।।
পঙ্গু পদ অন্ধে চক্ষু বধিরে শ্রবণ।
কুষ্ঠরোগী ভাল হয় পূজি নারায়ণ।।
এতদূরে পাচালী যে সমাপ্ত হইল।
সত্যনারায়ণ প্রীতে একবার হরি হরি বল।।

  • শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণের ব্রতকথা – সত্যনারায়ণ হলেন হিন্দু দেবতা বিষ্ণু-নারায়ণের একটি বিশেষ মূর্তি।পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে সত্যনারায়ণ সত্যপীর নামেও পরিচিত। সত্যনারায়ণের পাঁচালি ও ব্রতকথায় উল্লিখিত কাহিনি অনুযায়ী, সত্যনারায়ণ পীরের ছদ্মবেশ ধারণ করে নিজের পূজা প্রচলন করেছিলেন। গবেষকদের মতে, বাংলার সত্যনারায়ণ সত্যপীর ধারণাটি হিন্দু  ও মুসলমান সংস্কৃতির সংমিশ্রণের ফল। 

ব্রতের নিয়ম— এই ব্রতে কোনও তিথি নক্ষত্রের নিষেধ নাই। যে কোনও লােক প্রদোষকালে এই ব্রত করিতে পারে। নারী-পুরুষ, কুমার-কুমারী সকলেই এই ব্রত করিতে পারে। পূর্ণিমা বা সংক্রান্তি এই ব্রতের প্রসিদ্ধ দিন। উপবাসী থাকিয়া এই ব্রত করিতে হয়।

ব্রতের উপকরণ –

ঘট, আম্রপল্লব, ডাব বা কলা, গামছা, সিন্দুর, গঙ্গামাটি, ধান, পিড়ে বা চৌকী, পাতন বস্ত্র,তীরকাঠি, পান, কলা, সন্দেশ বা বাতাসা, পয়সা, ফুলের মালা, পতাকা, ফুলের তােড়া, ছুরি, তিল, হরীতকী, ফুল, তুলসী, দূর্বা, বেলপাতা, ধূপ, দীপ, পূজার বস্ত্র, গামছা, আসনাঙ্গুরীয়, মধুপর্কের বাটি, দধি, মধু, গব্যঘৃত, সিন্নির সামগ্রী নানাপ্রকার ফল কুচা, নৈবেদ্য, মিষ্টান্ন, দধি, গােময়, গােরােচনা, দক্ষিণা। 

ব্ৰতের ফল – যে কোনও বয়সের নর-নারী এই ব্রত করিতে পারে। এই ব্রত করিলে সংসারে কোনও প্রকার দুঃখ কষ্ট থাকে না। মনের সমস্ত কামনা-বাসনা নারায়ণ পূর্ণ করেন। 

ব্রতকথা— প্রথমে বন্দিনু আমি দেব গজানন।সর্ব সিদ্ধিদাতা আর বিঘ্ন বিনাশন। হর-গৌরী বন্দিনু বিরিঞ্চি নারায়ণ। বশিষ্ঠ বাল্মীকি আদি বন্দি মুনিগণ। প্রণমিনু সত্যপীর নিয়ত হাসিন। যাহার কৃপায় হয় ভুবন অখিল।লক্ষ্মী সরস্বতী বন্দি কালী করালিনী। সত্যপীর উপাখ্যান অপূর্ব কাহিনী।। শুন শুন সর্বজন হয়ে এক চিত। যার যে পাইবে বর মনে বাঞ্ছিত।। গরীব ব্রাহ্মণ এক ছিল মথুরায়। ভিক্ষা করি কাটে কাল সুখ নাহি পায়।। একদিন সেই দ্বিজ ভ্রমিয়া নগর। কিছু না পাইয়া = ভিক্ষা হইল কাতর। বৃক্ষতলে এসে বিপ্র বিষাদিত মন কান্দিতে লাগিল দ্বিজ ভিক্ষার কারণে। কান্দিতে কান্দিতে দ্বিজ হইল অস্থির। দেখিয়া দয়ার্দ্র বড় হৈল সত্যপীর।। দয়াময় প্রভুদেব সত্যনারায়ণ। ফকিরের বেশে তারে দিল দরশন। দ্বিজে কয় নারায়ণ, শুন মহাশয়। কি কারণে কাঁদে তুমি বসিয়া হেথায়।। দ্বিজ বলে, কি হইবে বলিলে তােমায়। ফকির বলেন দ্বিজ ক্ষতি কিবা তায়।। দ্বিজ বলে নিত্য আমি ভিক্ষা মাগি খাই। আজ না পাই ভিক্ষা দুঃখ ভাবি তাই। ফকির কহিল, দ্বিজ যাও নিজ ঘরে। আমারে পূজা তব দুঃখ যাবে দূরে।। দ্বিজ বলে, নিত্য পৃজি শিলা নারায়ণ। তাহা ভিন্ন না করিব স্নেচ্ছ আচরণ।। হাসিয়া ফকির বলে, শুন দ্বিজবর। পুরাণ কোরাণে কিছু নাহি মতান্তর।। রাম ও রহিমে জেনাে নাহি ভেদাভেদ। ত্রিজগতে এই দুই জানিবে অভেদ।। এত বলি নিজমূ্তি ধরে জগন্নাথ। শখ চক্র গদা পদ্মধারী চারি হাত।। মুক্তিহেরি দ্বিজবর পড়িল ধরণী। করিল প্রচুর স্তব গদগদ বাণী।। দেখিতে দেখিতে পুনঃ ফকির হইল। দেখি তাহা দ্বিজবর বিস্মিত হইল।ব্রাহ্মণ বলেন, প্রভু পূজিব তােমায়। পূজার পদ্ধতি কিবা বল হে আমায়। ফকির বলিল, তবে শুন দ্বিজবর।

ছড়া কলা করিবে আয়ােজন। সওয়া গণ্ডা গুবাক আর পন সওয়া পান।। সওয়া সেরা চিনি কিংবা গুড় আর ক্ষীর। তাহাতে সস্তুষ্ট হই আমি সত্যপীর।। চিনি আর ক্ষীর দিতে যার নাই শক্তি। দুগ্ধ আর গুড় দিয়ে করিবে ভক্তি। বসিবে সকল ভক্ত হয়ে একমন। এক মনে ভক্তিভরে করিবে পূজন৷ পূজা অন্তে ব্রতকথা শুনিবে শ্রবণে। ভক্তিতে পূজা কর শাস্ত্রের বিধানের সত্যপীর বলি সবে মাথে দিবে হাত। নারায়ণ বলিয়া করিবে প্রণিপাত। প্রসাদ লইবে সবে শাস্ত্রের বিধান। এত বলি নারায়ণ হন অন্তর্ধান ভক্তিভাবে দ্বিজবর হয়ে হরষিত। কিছু ভিক্ষা করি গৃহে হন উপনীত। ব্রাহ্মণী শুনিয়া সব হয়ে আনন্দিত। পূজা হেতু আয়ােজন করে বিধিমত। ভক্তিভাবে পূজা দ্বিজ নারায়ণ পদ। প্রভুর কৃপায় দ্বিজ লভিল সম্পদ৷৷ কাঠুরিয়াগণ সবে বিস্ময় মানিল। ভক্তিভরে ব্রাহ্মণের জিজ্ঞাসা করিল ৷৷ ব্রাহ্মণ তাদের বলে বিধান সমস্ত। কাঠুরিয়া পুজিবারে হৈল বড় ব্যস্ত। সিন্নি যে করিল তারা বিধি সহকারে। দুঃখ দূর হইল আনন্দ ঘরে ঘরে। অতঃপর সদানন্দ সাধু একজন। কাঠুরের সম্পদ দেখিয়া হৃষ্টমন। জিজ্ঞাসিয়া সবকথা জানিতে পারিল। শুনিয়া সাধুর মনে ভক্তি উপজিল।। সাধু বলে অপ্রতুল নাহি অন্যধনে। কন্যা নাই দুঃখ তাই সদা উঠে মনে। যদ্যপি আমার এক জনমে তনয়া। সত্যদেব পূজা করি আনন্দিত হৈয়া।এত বলি গেল সাধু অঙ্গীকার করি। যথাকালে জন্মে কন্যা পরমাসুন্দরী।সত্যনারায়ণ পূজা সে সাধু ভুলিল। যথাকালে কন্যাটির বিবাহ যে দিল। অতঃপর সাজাইল সপ্তমধুকর। জামাতা সহিত সাধু চলিল সত্বর। দক্ষিণ পাটনা রাজা নাম কলানিধি। সেই রাজ্যে সদাগরে মিলাইল বিধি৷৷ রাজা সম্ভাষিয়া তাকে তরণী চাপিয়া। প্রমাদ ঘটিল তার সিন্নি নাহি দিয়া।। রাজার ভাণ্ডার মাঝে ধনাদি যা ছিল। রাত্রিতে আসিয়া সাধুর তরী পূর্ণ হল৷৷ ছল পেয়ে রাজা তার তরী লুঠ করে। শ্বশুর জামাতা লয়ে রাখে কারাগারে রাজাদেশে কোটাল মশানে লয়ে যায়। পাত্র অনুরােধে তারা উভে প্রাণ পায়৷৷ কারাগারে বন্দী থাকে শ্বশুর জামাই। কি কহিব উভয়ের দুঃখের সীমা নাই। এখানে সাধুর পত্নী আর তার সুতা। পতির বিলম্ব দেখি মহা শােকযুক্তা।। সঙ্গতি বিনষ্ট হৈল পড়িল দুঃখেতে। দাসীত্ব করিয়া খায় পরের গাহতে৷ একদিন সাধুকন্যা বেড়াইতে গিয়া। আনন্দিত দ্বিজ-গুহে সিন্নি দেখিয়া।। সব শুনি কন্যা সেথা মানত করিল।

পিতা আর পতি-আশে কামনা করিল।। শ্বশুর জামাতা যেথা বন্দী কারাগারে। নারায়ণ স্বপ্নে কন সেই নৃপবরে৷৷ শুন ওহে মহারাজ আমার বচন। কলিকালে পূজী আমি সত্যনারায়ণ৷ সদাগর দুইজন শ্বশুর জামাই। বিনাদোষে বন্দী আছে তােমারে জানাই৷৷ প্রভাত হইলে তুমি দুই সদাগরে। দশগুণ ধন দিয়া তুষিবে আদরে।। এত বলি ধরিলেন আপন মূরতি।স্বপ্ন দেখি চমকিয়া উঠিল নৃপতি।মুক্ত করি সদাগরে বহুধন দিল। তরী পূর্ণ করি রাজা বিদায় করিল।। বুঝিতে সাধুর মন সত্যনারায়ণ। ফকিরের বেশে পথে দিল দরশন।। ফকির বলেন, শুন ওহে সদাগর। ফকিরেরে কিছু ভিক্ষা দিয়া যাও ঘর৷৷ শুনি সদাগর তারে অবজ্ঞা করিল। তরীর সামগ্রী যত তুষাঙ্গর হৈল। দেখি তাহা সদাগর করে হায় হায়। ধরণী লােটায়ে ধরে ফকিরের পায়। অবশেষে ফকির তাহারে কৃপা কৈল। ধনৈশ্বর্যে তরী পুনঃ পরিপূর্ণ হৈল।। উতরিল ঘাটে সাধু হৈল কোলাহল। নাধুর রমণী কন্যা শুনি কুতুহল।। তরীর সামগ্রী যত ভাণ্ডারেতে লৈয়া। সিন্নি করিল সাধু আনন্দিত হৈয়া।। সকলে প্রসাদ নল যােড় করি পাণি। প্রসাদ ভূমিতে ফেলে সাধুর নন্দিনী।। তাহা দেখি সত্যদেব কৃপিত হইল। জামাতা সহিত তরী জলেতে ডুবাল।৷ হাহাকার করে সরবে পড়িয়া ভূমেতে।শুনি সাধু কন্যা যায় ডুবিয়া মরিতে। হেনকালে দৈববাণী হৈল আচম্বিত । সিরনি ফেলিয়া কন্যা কৈল বিপরীত।। শুনি কন্যা সেই সিন্নি চার্টিয়া খাইল। জামাতা সহিত তরী ভাসিয়া উঠিল তরীর সকল দ্রব্য ভাণ্ডারেতে আনি। করিলেক সওয়া সের সোনার সিরনী। স্বপ্নে কহিলেন দেব, শুন সাধু তুমি। সোনা হতে আটায়, সন্তোষ হই আমি। স্বপ্ন দেখি সদাগর পরম হরিষে। আটার সিন্নী করি পূজে সবিশেষে।। ক্রমেতে প্রচার হ’ল সবার আলয়। ভক্তিভরে পূজিলেই আশা পূর্ণ হয়। একমনে শুনে কিংবা পূজে নারায়ণ। সর্বদুঃখ দূরে যায় শাস্ত্রের বচন।। সিন্নি মেনে যেই জন হয় দুই মনা। কদ্যপি না হয় সিদ্ধ তাহার কামনা।

– অথ সত্যনারায়ণের ব্রতকথা সমাপ্ত

শ্রী বিষ্ণুর প্রণাম মন্ত্র –

 –ওঁ পাপহং পাপকর্মাহং পাপাত্মা পাপসম্ভব। ত্রাহিমাং পুন্ডরিকাক্ষ সর্ব্বপাপ হরি।। নমঃ কমলনেত্রায় হরয়ে পরমাত্মনে। অশেষ ক্লেশনাশায় লক্ষ্মীকান্ত নমোহস্তুতে।।

সংগিহীত

Share This Article
Facebook Pinterest Whatsapp Whatsapp Telegram Email Copy Link Print
Share
এটি পড়ে আপনার কেমন অনুভূতি হল?
Love3
Sad0
Cry0
Happy9
Surprise6
Previous Article নারায়ণ স্তোত্রম্ /স্তব
Next Article গোপালের ধ্যান ও প্রণাম মন্ত্র
Leave a comment Leave a comment

Leave a Reply Cancel reply

You must be logged in to post a comment.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

- Advertisement -

Most Popular

জগন্নাথ দেবের প্রনাম মন্ত্র , জগন্নাথ স্তোত্রম, জগন্নাথদেব এর গায়ত্রী মন্ত্র
পূজার মন্ত্র
তারা মায়ের ধ্যান মন্ত্র – Tara Maa Dhyan Mantra
পূজার মন্ত্র
Surya Mantra
সূর্য প্রণাম মন্ত্র – জানুন সূর্য প্রনামের সর্বস্ব
পূজার মন্ত্র
মা লক্ষ্মীর ১০৮ নাম
মা লক্ষ্মীর ১০৮ নাম
দেব-দেবী

Upcoming Rituals

Durga Puja Calendar 2024 / দুর্গা পূজার তারিখ
দিনকাল, অনুষ্ঠান ও ঘটনা ভারতীয় প্রথা
কলকাতার মা শ্যাম সুন্দরী / জীবন্ত কালী কেনো বলে শ্যামসুন্দরীকে
দিনকাল, অনুষ্ঠান ও ঘটনা ভারতীয় প্রথা
চন্দন যাত্রা কেনো পালন করা হয়
উৎসব দিনকাল, অনুষ্ঠান ও ঘটনা ভারতীয় প্রথা
নরক চতুর্দশী কেনো পালন করা হয়
দিনকাল, অনুষ্ঠান ও ঘটনা ভারতীয় প্রথা
Bharat RitualsBharat Rituals
Follow US
© 2023, Bharat Rituals | তথ্যসূত্রঃ গীতা, পঞ্জিকা, মন্ত্র, পুরোহিত, ইন্টারনেট ইত্যাদি। আমাদের উদ্দেশ্য প্রাচীন ভারতের প্রথা ও সংস্কৃতি কে সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা। কোনও ধর্মীয় ভাবাবেগ কে আঘাত/অপমান/ছোটো করা নয়। আমরা সমস্ত ধর্ম কে সমান শ্রদ্ধা ও সন্মান করি।
adbanner
AdBlock Detected
বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে আমরা এই ওয়েবসাইট এর খরচ বহন করে থাকি, আপনি যদি দয়া করে আপনার ব্রাউজারের Adblocker এই সাইটের জন্য বন্ধ রাখেন, খুব উপকৃত হব। ধন্যবাদ
Okay, I'll Whitelist
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?