শ্রী কৃষ্ণের কেন ভালোবাসেন বাঁশি কে এত? এই প্রশ্ন আমরা অনেকেই ভেবে থাকি।সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আমরা চলে এসেছি আজ।
শ্রী কৃষ্ণের খুবই প্রিয় জিনিস হল বাঁশি তাই তার আর এক নাম মোহন-বংশীধারি।কৃষ্ণ কে আমরা বাঁশি ছাড়া ভাবতেই পারিনা কখনোই। বাঁশি নিয়ে গান ও আছে অনেক তার মধ্যে একটি হলো “শ্যামের ও বাঁশি বাজে কোন সে ” ।শ্রীকৃষ্ণ তিন প্রকারের বাঁশী ব্যবহার করেন। তার একটিকে বলা হয় বেণু, অন্যটি মুরলী এবং তৃতীয়টি বংশী।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের যখন বাল্য কাল ।খেলা করতে করতে একদিন গঙ্গার তীরে গিয়েছিলেন। দেখলেন একজন বৃদ্ধ বাঁশি বাজাচ্ছেন এবং বাশি বিক্রি করছেন।। ওই বাঁশির সুর শুনে শ্রীকৃষ্ণ বৃদ্ধ লোকটির কাছে যান এবং বলেন, হে মুনিবর আপনার বাঁশির সুর খুব সুন্দর। আপনি কি আমাকে শিখাবেন বাশি বাজানো । তখন বৃদ্ধ লোকটি বললেন তুমি খুব ছোট।। তুমি পারবে না বাঁশি বাজাতে। তখন শ্রীকৃষ্ণ কেঁদে ফেললেন এবং বললো আমি পারবো দয়া করে আমাকে শিখিয়ে দিন।। এই অপূর্ব লীলা বিলাস দেখে সমস্ত দেব দেবী হাসছিলেন। এই ভেবে যার কাছে সবকিছু নতজানু, তিনি বাঁশি শেখার জন্য কাঁদছেন।বৃদ্ধ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এর এই লীলা দেখে খুব দয়া হলো তারপর বৃদ্ধ বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে শিখাবো। তখন শ্রীকৃষ্ণ খুবই আনন্দিত হলেন। বৃদ্ধ লোকটি শ্রীকৃষ্ণ এর হাতে একটি বাঁশি দিলেন এবং বললেন, আমি যেভাবে বাজাবো তুমিও ঠিক সেইভাবে বাঁশি বাজাবে। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, ঠিক আছে। বৃদ্ধ যখনই বাঁশিতে ফু দিলেন, তখনই শ্রীকৃষ্ণ বাঁশিতে ফুঁ দিলেন। শ্রীকৃষ্ণ যখন বাঁশি সুর তুললেন, সেই সুর শুনে সমস্ত দেবদেবী, সমস্ত জীব জগৎ বিমোহিত হয়ে গেল। দেব দেবী পুস্প বৃষ্টি করতে লাগল। তখন বৃদ্ধ লোকটি ভাবলেন, এ কোন সাধারন বালক নয়।। শ্রীকৃষ্ণ বাঁশি বাজাচ্ছিলেন, সেই সময় বৃদ্ধ লোকটি তার চরনে শুয়ে পড়লেন।
বাঁশি শুনলেই প্রথমেই যে নামটি মনে আসে, তা হলো শ্রীকৃষ্ণ। আর শ্রীকৃষ্ণের নাম করলে প্রথমেই মনে আসে বাঁশির কথা। শ্রীকৃষ্ণ ও বাঁশি এভাবেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন হিন্দু শাস্ত্রে। মনে করা হয়, বাঁশি হলো মানুষ কর্তৃক সর্ব প্রথম আবিস্কৃত বাদ্য যন্ত্র গুলির মধ্যে একটি। প্রায় চার হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো ইতিহাস এটির। ফলে, হিন্দু শাস্ত্রে উল্লেখিত সত্য যুগের সাথে ও বিভিন্ন দেব দেবীর সাথে এই বাদ্য যন্ত্রের বিশেষ যোগাযোগ রয়েছে। পুরান সহ অন্যান্য হিন্দু গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে এটির।
শ্রীকৃষ্ণের বাঁশিতে শুধু মাত্র রাধারানীই পাগলিনী ছিলেন না। ব্রজ ভূমি থেকে শুরু করে, পশু পাখি কীটপতঙ্গ তথা সকল গ্রামবাসী বিভোর থাকতেন এই সুরে।
বলা হয়, ভগবান বিষ্ণুর অবতার শ্রী কৃষ্ণ সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের তাল পরিচালিত করেন তাঁর বাঁশির সুরে। এই বাঁশির সুর অদ্বিতীয় ও ঐশ্বরিক । এই বাঁশির সুর লয়ের মতোই এই ব্রহ্মাণ্ডে সব কিছুতে তাঁর নিয়ম বিরাজ করে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, মহাভারতে অর্জুনকে বিশ্বরূপ দেখিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। তিনি যে ব্রহ্মাণ্ডের সকল কিছুতে বিরাজমান, ও বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের পরিচালক ।
বাঁশিকে তুলনা করা হয়, শ্রী কৃষ্ণের প্রকৃত ভক্তের সাথে। বাঁশি যেরকম ভিতরে ফাঁপা হয়, এবং বাঁশিবাদকের বায়ু চালনার সাথে তার মধ্যে সুরের সৃষ্টি হয়, তেমন প্রকৃত ঈশ্বর ভক্তের অন্তরও হয় এরকম আত্ম-অহংকারহীন ও শূন্য, যার নিজস্ব কিছুই থাকে না, যে শুধু মাত্র ঈশ্বরের ইচ্ছের কাছে নিজেকে সমর্পন করে এবং স্বয়ং তাঁর ইচ্ছার দ্বারা পরিচালিত হয়। বাঁশিতে যেমন একটি মাত্র দিক খোলা অবস্থায় থাকে, তেমনই একজন প্রকৃত ভক্তের মনের দ্বার শুধু মাত্র পরমাত্মার প্রতিই উন্মুক্ত থাকে। তাই শ্রী কৃষ্ণ বাঁশিকে সর্বদা নিজের অঙ্গ বদ্ধ রাখেন। সকল গোপিকা তথা রাধারাণীর অত্যন্ত ঈর্ষার বস্তু ছিল শ্রীকৃষ্ণের এই বাঁশি। শোনা যায়, বৃন্দাবন ছেড়ে শ্রী কৃষ্ণ যখন মথুরার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। রাধারানী তাঁর বাঁশিটি নিজের কাছে রেখে দেন, যাতে বাঁশির টানে শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে পুনরায় ফিরে আসেন। কিন্তু তা বাস্তবে ঘটেনি। শ্রীকৃষ্ণ ফেরেননি আর বৃন্দাবনে। পরবর্তীকালে তার বাঁশির স্থান নেয়, তাঁর প্রিয় শঙ্খ “পাঞ্চজন্য”।
শ্রী কৃষ্ণের বাঁশি র কথা কেমন লাগলো তা অবশ্যই Comment box এ জানাবেন।