শিবনিবাস।
শিবের নিবাস শিবনিবাস।
কথায় বলে শিবনিবাস দর্শনে কাশীর পূর্ণ হয়। প্রবাদ আছে।
শিবনিবাসী তুল্য কাশী।
ধন্য নদী কঙ্কনা।
উপরে বাজে দেব ঘড়ি।
নিচেতে ঠন্ ঠ্না।
২৬০ বছরের ইতিহাস কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রাজবাড়ীর সভাগৃহে নিজের সভাসদদের সঙ্গে আলোচনারত, চোখে মুখে গভীর চিন্তার ছাপ। বাংলা আক্রমণ করছে দুর্ধর্ষ মারাঠা বর্গী ভাস্কর পন্ডিতের নেতৃত্বে।
ক্রমশ এগিয়ে আসছে কৃষ্ণনগরের দিকে, রাজবাড়ী সুরক্ষিত নয় চারদিক খোলামেলা। বর্গীরা আক্রম করলে আর্তসমর্পণ অবধারিত, রাজবাড়ী সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। এদিকে গোদের উপর বিষ ফোঁড়া,ডাকাত নসরত খাঁ, তাঁর ডাকাতির জ্বালায় প্রজারা অতিষ্ঠ।রোজ রোজ প্রজাদের কাছ থেকে অভিযোগ আসছে।
মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র সিদ্ধান্ত নিলেন আগে, ঘরের শত্রুকে শায়েস্তা করতে হবে। সেই মত সৈন্য সামন্ত নিয়ে চললেন নসরত খাঁকে ধরতে। এখনকার ভিমপুরের কাছে ডাকাতের মাঠে ধরা পড়লো নসরত খাঁ। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বিশ্রাম নিতে শিবির ফেললেন চূর্ণী নদীর তীরে।পরের দিন কৃষ্ণচন্দ্র হাত মুখ ধোয়ার জন্য গেলেন চূর্ণী নদীতে। নদীর জলে মুখ হাত পা ধোয়ার সময় হঠাৎই একটি ঘটনা ঘটলো। একটি মাছ নদী থেকে লাফিয়ে মহারাজার কোলে এসে পড়ল। মহারাজ, রাজপুরোহিতকে এই ঘটনার কারণ জিজ্ঞাসা করতে, রাজপুরোহিত বললেন মহারাজ যেখানে মাছ নিজেই রাজার খাদ্য হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করে সেই স্থান রাজধানীর জন্য উৎকৃষ্ট। মহারাজ আপনি এই স্থানে রাজধানী স্থাপন করুন। কৃষ্ণচন্দ্রের নিকট আত্মীয় ও পরামর্শদাতা কৃষ্ণরাম ও সহমত পোষণ করলেন। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রেরও জায়গাটা খুব পছন্দ হয়েছিল। অঞ্চলটিকে চূর্ণী নদী তিনদিকে ঘিরে রেখেছে,কঙ্কনা আকারে। তাই এখানে চূর্ণী আরেক নাম কঙ্কনা। (ভিন্নমতে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র শিবনিবাসকে সুরক্ষিত রাখতে ইছামতি নদীর থেকে চূর্ণী নদীকে সংযোগ করে একটি খাল কেটেছিলেন সেই খালটিই কঙ্কনা) কৃষ্ণচন্দ্র কৃষ্ণনগর থেকে রাজধানী সরিয়ে নিয়ে এলেন। তৈয়ারী হল রাজবাড়ী।
রাজবাড়ীটি প্রধান গেট মস্কোর ক্রেমলিন প্রাসাদের অনুকরণে নির্মিত হয়েছিল। এখন ভগ্নস্তূপ
কয়েকটি দেয়াল ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে দাঁড়িয়ে আছে। রাজধানীতে রাজবাড়ী থাকবে, মন্দির থাকবে না তা কখনো হয়? মহারাজ শিবনিবাসে ১০৮ শিবমন্দির ও একটি রামসিতার মন্দির তৈরী করেছিলেন। বর্তমানে ২টি শিবমন্দির ও রামসিতার মন্দির দেখা যায়, বাকি মন্দিরগুলো কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে। এই তিনটি মন্দির ১৯৬৫/১৯৬৬ সালে বিড়লা জন কল্যান ট্রাষ্ট সংস্কার করে দেয়।
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র ,কাশী,কাঞ্চি থেকে পন্ডিত মন্ডলী নিয়ে এসে মহাসমারোহে অগ্নিহোত্র বাজপেয়ী যজ্ঞ করান। পন্ডিত মন্ডলী কৃষ্ণচন্দ্রকে অগ্নিহোত্রী বাজপেয়ী আখ্যা প্রদান করেন। আর বলেন শিবনিবাস যারা দর্শন করবে তাঁরা কাশীর সম পূর্ন্য প্রাপ্তী হবেন। সেই জন্য শিবনিবাস দর্শনে কাশীর পূর্ন্য হয়।
রাজরাজেশ্বরশিবমন্দির
১২০ ফুট উঁচু দেউলধর্মী মন্দির আঁটকোনা প্রতিকোনায় সরু মিনার ও প্রবেশ পথ খিলান,পাশে দেয়ালে নকল ভরাট করা খিলান রয়েছে,গথিক ও মুসলিম স্থাপত্যের মিশ্রনে উচুঁ বেদীর উপর নির্মিত। নির্মান শৈলী তে বাংলার স্থাপত্য শিল্পের নতুন ধারা বহন করে। শিখরে ছোট ছোট গর্ত করা, প্রচুর ঠিয়া পাখির বাস। মন্দিরটি স্থাপিত হয় ১৬৭৬ শকাব্দ (১৭৫৪ খ্রিষ্টাব্দ) ভিতরের শিবলিঙ্গটি ১১ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতা, বেড় ৩৬ ইঞ্চি। শিবলিঙ্গের মাথায় জল ঢালার জন্য পাশে সিঁড়ি করা আছে। উচ্চতা ও বেড়ে রাজজেশ্বর শিবলিঙ্গটি পূর্বাঞ্চলে সর্ববৃহৎ।
রাজ্ঞীশ্বরশিবমন্দির
কৃষ্ণচন্দ্র দ্বিতীয় মহিষীর নামে তৈয়ারী করেছিলেন। শিবলিঙ্গটি ৭ফুট উঁচু।
রামসীতারমন্দির
পশ্চিমমূখী চারচালা মন্দির, মন্দিরের উপর চারকোনা শিখর রয়েছে।কষ্টি পাথরের রাম ও অষ্টধাতুর সীতার মুর্তি প্রতিষ্ঠিত। রামচন্দ্রের মুর্তিটি গান্ধার শিল্পের প্রভাব রয়েছে।মাথার মুকুটটি খুলে নিলে বুদ্ধমূর্তি মনে হবে। সঙ্গে আরো অনেক ছোট ছোট দেবতার মুর্তি রয়েছে। ভিম একাদশীতে প্রধান খুব বড় মেলা হয় তাছাড়া শিবরাত্রি ও চড়ক উৎসব পালন করা হয়।
চুর্নীনদী
বছর ৩০ আগে প্রথমবার শিবনিবাস গিয়েছিলাম তখন চুর্নীনদীতে খেয়া পারাপার করতো। পারাপার করতে লাগতো ১০পয়সা।জল ছিল কাঁচের মত স্বচ্ছ, জলের নিচে বড় বড় মাছ দেখা যেত।এখন বাঁশের সেতু।
বাংলাদেশের কিছু কলখানার বজ্য ফেলার ফলে চুর্নী জল কালো, নোংরা, দূষিত।
নদীর ঘাট থেকেই নজরে পড়ে সুউচ্চ মন্দিরের চুড়ো। সামান্য হাঁটাপথ। ডান দিকের মন্দিরটি সব চেয়ে উঁচু — ১৬৭৬ শকাব্দ তথা ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত রাজরাজেশ্বর শিবমন্দির। লোকমুখে বুড়ো শিবের মন্দির বলে খ্যাত। চুড়ো সমেত এই মন্দিরের উচ্চতা ১২০ ফুট, আটকোনা মন্দির, প্রতিটি কোনায় মিনার ধরনের সরু থাম। এক ঝলক দেখলে গির্জা বলে মনে হয়। মন্দিরের ভিতর কালো শিবলিঙ্গ, উচ্চতা ১১ ফুট ৯ ইঞ্চি, বেড় ৩৬ ফুট। সিঁড়ি দিয়ে উঠে শিবের মাথায় জল ঢালতে হয়। পূর্ব ভারতে এতো বড় শিবলিঙ্গ আর নেই। পথের ডান দিকে যা মন্দির, সেটির নির্মাণ ১৭৬২-তে। বর্গাকার প্রস্থচ্ছেদের মন্দির। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের দ্বিতীয় মহিষীর প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরের ‘রাজ্ঞীশ্বর’ সাড়ে ৭ ফুট উঁচু। পথের বাঁ দিকে রামসীতা মন্দির। পশ্চিমমুখী চার চালা মন্দির। শিখরে ৪টি মিনার।
শিবনিবাসে যা ছিল এ তার অতি সামান্য নিদর্শন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বর্গী হামলার সময় এখানে রাজধানী সরিয়ে আনেন। আর তাদের হাত থেকে রাজধানীকে রক্ষা করতে খাল কাটলেন। সেই খাল জুড়ল দুই নদীকে, ইছামতী আর চূর্ণি। সেই খাল আজকের কংকনা নদী, যে নদী পেরিয়ে এসেছ এই শিবনিবাসে। ১০৮ শিবের বসত ছিল এই শিবনিবাস। লোকে বলত, “শিবনিবাস তুল্য কাশী, ধন্য নদী কংকনা”। ছিল রাজপ্রাসাদও। মাত্র তিনটি মন্দির টিকে আছে। বাকি সব ধ্বংস, যার চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শিবনিবাসে।
আড়াইশো বছরের এক গৌরবময় ইতিহাসের পাঠ নিতে এক দিন চলো বাংলার কাশী শিবনিবাসে। কৃষ্ণনগর থেকে কৃষ্ণগঞ্জ হয়ে সড়কপথে শোনঘাটা। শোনঘাটা পেরোতেই ডান দিকে নজরে পড়বে যাত্রীছাউনি, ‘বাসযাত্রী বিশ্রামাবাস, শিবনিবাস’। ডান দিকের পথ ধরে চলে এসো নদীর পারে। নৌকা থাকবে ঘাটে। নিয়মিত পারাপার চলছে। নদী পেরিয়ে চলে এসো শিবনিবাসে। আরও এক ভাবে আসা যায় এখানে। শিয়ালদহ থেকে গেদে প্যাসেঞ্জারে কৃষ্ণনগর পেরিয়ে তারকনগর হল্ট। সেখান থেকে রিকশায় শিবনিবাস।
নদীর ঘাট থেকেই নজরে পড়ে সুউচ্চ মন্দিরের চুড়ো। সামান্য হাঁটাপথ। গুটিগুটি পায়ে চলে এসো মন্দির প্রাঙ্গণে। একেবারে ডান দিকের মন্দিরটি সব চেয়ে উঁচু — ১৬৭৬ শকাব্দ তথা ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত রাজরাজেশ্বর শিবমন্দির। লোকমুখে বুড়ো শিবের মন্দির বলে খ্যাত। চুড়ো সমেত এই মন্দিরের উচ্চতা ১২০ ফুট, আটকোনা মন্দির, প্রতিটি কোনায় মিনার ধরনের সরু থাম। এক ঝলক দেখলে গির্জা বলে মনে হয়। মন্দিরের ভিতর কালো শিবলিঙ্গ, উচ্চতা ১১ ফুট ৯ ইঞ্চি, বেড় ৩৬ ফুট। সিঁড়ি দিয়ে উঠে শিবের মাথায় জল ঢালতে হয়। পূর্ব ভারতে এতো বড় শিবলিঙ্গ আর নেই। পথের ডান দিকে যা মন্দির, সেটির নির্মাণ ১৭৬২-তে। বর্গাকার প্রস্থচ্ছেদের মন্দির। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের দ্বিতীয় মহিষীর প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরের ‘রাজ্ঞীশ্বর’ সাড়ে ৭ ফুট উঁচু। পথের বাঁ দিকে রামসীতা মন্দির। পশ্চিমমুখী চার চালা মন্দির। শিখরে ৪টি মিনার।
শিবনিবাসে যা ছিল এ তার অতি সামান্য নিদর্শন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বর্গী হামলার সময় এখানে রাজধানী সরিয়ে আনেন। আর তাদের হাত থেকে রাজধানীকে রক্ষা করতে খাল কাটলেন। সেই খাল জুড়ল দুই নদীকে, ইছামতী আর চূর্ণি। সেই খাল আজকের কংকনা নদী, যে নদী পেরিয়ে এসেছ এই শিবনিবাসে। ১০৮ শিবের বসত ছিল এই শিবনিবাস। লোকে বলত, “শিবনিবাস তুল্য কাশী, ধন্য নদী কংকনা”। ছিল রাজপ্রাসাদও। মাত্র তিনটি মন্দির টিকে আছে। বাকি সব ধ্বংস, যার চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শিবনিবাসে।