হিন্দু সংস্কৃতিতে সন্ধ্যা হলে গৃহস্থবাড়িতে তুলসী তলায় দেওয়া হয় সন্ধে , প্রদীপ । পুজোর অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে নৈবেদ্য, বস্ত্র, ধুপ এবং প্রদীপ। এছাড়াও পুজোর সময় অন্ধকার দূর করার জন্য চারিদিকে প্রদীপ জ্বালানো হত।
সদর দরজার সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা হতো। কোন পথিকের প্রয়োজন হলে যেন তিনি আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেন। বর্তমানেও গ্রামাঞ্চলের দিকে কিছু কিছু স্থানে সদর দরজায় প্রদীপ জ্বালানোর নিয়ম রয়েছে এখনো।
সন্ধ্যা কথাটা এসেছে সন্ধি থেকে। একটি দিনকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যখন দুই কাল এর সন্ধি হয় তাই সন্ধ্যা। এটি দুই সময়ই প্রযোজ্য। যখন দিন থেকে রাত হয় আর যখন রাত থেকে দিন। এই সময়গুলিকে মানুষের জন্য গুরত্বপূর্ণ মানা হয়, কারণ তখন এনার্জির পরিবর্তন ঘটে। আমাদের উপর এনার্জির প্রভাব থাকেই।হিন্দু মতে ব্রহ্মাণ্ড পাঁচটি তত্ত্ব দিয়ে তৈরি, আর পাঁচটি তত্ত্বের সমন্বয়ে সবকিছু সুচারু রূপে চলে। তাই নিত্য পদ্ধতিতে কিছু উপাদান ব্যবহার হয় যা দিয়ে এই তত্ত্বগুলিকে সঞ্চারিত করা হয়। ধূপকাঠি দিয়ে বায়ু তত্ত্বকে সঞ্চারিত করা হয়। প্রদীপ দিয়ে অগ্নি তত্ত্ব, জল দিয়ে জলতত্ত্ব, ধূপ দিয়ে বায়ু তত্ত্ব, ফল ও ফুল দিয়ে পৃথিবী তত্ত্বকে সঞ্চারিত করা হয়। একাগ্রচিত্তে মন্ত্র উচ্চারণে বা জপ করে আকাশ তত্ত্ব সঞ্চারিত হয়। শঙ্খ ও কাঁসর বাজানো হয় কারণ এই শব্দে পরিবেশে, বাতাসে বিদ্যমান অনেক রকম জীবাণুর অবসান হয়। এই সবকিছুর সমন্বয়ে আরাধনা করতে হয়, সেই নিরাকার পরম ব্রহ্মের।
সন্ধে দেবার সময় হচ্ছে সূর্যাস্তের ঠিক কয়েক মুহূর্ত পরে গোধূলির সময় রাতের ঠিক আগে।’ সন্ধ্যা’কে সময় জ্ঞানে মানা হয় অর্থাৎ দুটো সময়ের সন্ধিক্ষণকে বোঝানো হয় — রাত্রি শেষ দিনের শুরু ‘প্রাত সন্ধ্যা’ , মধ্যাহ্নের শেষ অপরাহ্নের শুরু ‘ মধ্যাহ্ন সন্ধ্যা,’ দিবা ভাগের শেষ মুহূর্ত রাত্রি শুরু ‘স্বায়ংসন্ধ্যা ‘। এই তিন সময়ে উপবিত ধারী ব্রাহ্মণগণ গায়ত্রীকে আহ্বাহন করে সন্ধ্যা আহ্নিক ক্রিয়া করে থাকেন। সনাতন পন্থীরাও এই তিন সময়ে যার যার ইষ্ট মন্ত্র জপ-ধ্যান করেন। অনেকে মন্ত্র জপ করে সন্ধ্যা দেয়।বহু দিন আগের প্রথা। এখন বর্তমান সমাজে সন্ধ্যা দেওয়ার প্রথা উঠেই গেছে।কিন্তু আমাদের ও উচিত আগের সকল প্রথা কে মেনে চলা।
আমাদের লেখা কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন Comment box এ। আর সন্ধ্যা সম্পর্কে আরো কোনো তথ্য থাকলে আমাদের জানাবেন।