নবান্ন কথার অর্থ ‘নতুন অন্ন’।নবান্ন উৎসব হিন্দু দের প্রাচীন প্রথা।কার্তিক কিংবা অগ্রহায়ণ মাসে নতুন আমন ধান কাটার পর নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কোন কোন অঞ্চলে মাঘ মাসেও এ উৎসব পালিত হয়।নতুন ধান হতে প্রস্তুত করা প্রথম খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এপার বাংলা ও ওপার বাংলার ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব নবান্ন। হিন্দুশাস্ত্রে নবান্নের উল্লেখ ও তার রীতি নির্দিষ্ট করে বর্ণিত করা রয়েছে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃ-পুরুষ অন্ন প্রার্থনা করে থাকেন। এই কারণে হিন্দু বিধি অনুযায়ে নবান্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে থাকেন। বাংলার কৃষি সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম।নবান্ন” উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করা হয়। এ উপলক্ষে বাড়ির মেয়েকে শশুর বাড়ি থেকে কয়েকদিন আগেই পিতৃগৃহে আনা হয়। বাড়ির শাশুড়ি, বউ ও মেয়েরা নানা রকমের খাবার ও পিঠা তৈরি করতে প্রস্তুতি নেয়। বিভিন্ন বাড়িতে ঢেকিতে ধান ভানা ও গুড়ি কুটার ধুম লেগে যায়। নতুন ধানের খই, মুড়ী ও নানা ধরনের পিঠা দ্বারা নবান্ন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত, অতিথিদের আপ্যায়ণ করা হয়।নবান্ন উৎসবটি বিভিন্ন সম্প্রদায় ও অঞ্চলে বিভিন্নভাবে পালিত হয়। কিছু রীতি অনুযায়ী আত্মীয় স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড়সহ নতুন ধানের অন্ন গ্রহণ করে কারণ এটি খুবই সুস্বাদু । নবান্ন উৎসবের মাধ্যমে পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরদার হয়।
নবান্নের ইংরেজি নাম ‘New Rice Festival’ নবান্ন মানে নতুন অন্ন। নতুন ফসল ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষকরা এই উৎসব পালন করে থাকে। সে সময় আমন ধান কাটা হয়। এই নতুন ধানের চাল দিয়ে রান্না উপলক্ষে নবান্ন উৎসব হয়ে থাকে। কোন কোন অঞ্চলে ফসল কাটার আগে বিজোড় সংখ্যক ধানের ছড়া কেটে নিয়ে ঘরের চালে বেঁধে রাখে এবং বাকী অংশ চাল করে নতুন চালের পায়েশ করে নবান্ন করে থাকে। নবান্ন উৎসব উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিশুরা ধানখেত থেকে ধান কেটে বাড়ি এলে তাদের বরণ করে নেওয়া হয়।অনেকেরই মতে কৃষি প্রথা চালু হবার পর থেকে নবান্ন উৎসব পালন হয়ে থাকে। তবে ৪৭ এর দেশভাগের পর এই উৎসব ধীরে ধীরে কদর হারাতে থাকে।নবান্ন উৎসব এর অন্যতম প্রথা হচ্ছে কাকবলি। একটি কলার ডোগায় নতুন চাল, কলা, নারকেল নাড়ু কাককে খাওয়াতে হয়। প্রচলিত বিশ্বাস হচ্ছে কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই নিয়ে ছড়া আছে। ছোট ছেলে-মেয়েরা ছড়া কেটে দাড় কাককে নিমন্ত্রন করত।
নবান্ন ছড়া:
“কো কো কো,
আমাগো বাড়ি শুভ নবান্ন।
শুভ নবান্ন খাবা, কাকবলি লবা,
পাতি কাউয়া লাঠি খায়,
দাড় কাউয়া কলা খায়,
কো কো কো,
মোর গো বাড়ি শুভ নবান্ন।”
নবান্ন উৎসবে কাকবলি, লক্ষ্মীপূজা, পিতৃশ্রাদ্ধ হয়ে গেলে সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করত। সবাই একসাথে খেত এবং উলুদ্ধনি করত। এখানেই নবান্ন উৎসব শেষ হত না, সাধ্যানুসারে এই উৎসব উপলক্ষে প্রায় কুড়ি থেকে চল্লিশ পদের রান্না হত। বিভিন্ন রকমের শাক রান্না করা হত। দুপুরের নবান্ন অন্যের বাড়িতে করলেও রাতের নবান্ন সবাই নিজ বাড়িতে করত। নবান্নের পরের দিনও নবান্নের রেশ থাকত সেটাকে বলা হত ‘বাসি নবান্ন বা বাস নবান্ন।’ এই উৎসব একমাস পালন করা হয়। এই উৎসবে অংশগ্রহনের আমেজ ই আলাদা হয়।
আমাদের নবান্ন উৎসব কেমন লাগলো তা অবশ্যই Comment box এ জানাবেন।