বড় শীতলা মা হাওড়া সালকিয়া অঞ্চলের অতি জাগ্রত ঠাকুর ভক্তরা তাদের মনোবাঞ্জা নিয়ে মন্দিরে ঠাকুরের কাছে কামনা করেন এবং প্রায় প্রত্যেকেই তাদের মনোমত কার্য্য পান।
প্রতি বৎসর মাঘীপূর্ণিমায় বিশাল শোভাযাত্রা করে বড়মাকে সালকিয়ার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল প্রদক্ষিণ করানো হয়, সাথে থাকেন মায়ের আরো সব ছোট বোনেরা, সে এক দেখার মতন শোভাযাত্রা. লাখো লাখো দর্শনার্থী মায়ের সিংহাসন ছোঁয়ার আকুলতা, মায়েদের সিংহাসন ছুঁয়ে কিছুটা পথ অতিক্রম করাকে, কেন্দ্র করে নিজেদেরকে ভাগ্যবান মনে করা।
মাঘি পূর্ণিমা র দিন শীতলা মা স্নান করে যখন বাড়িতে ফেরে।তখন অভিষেক করানো হয়।তারপর শুরু হয় ষোলআনা পূজা প্রস্তুতি।ভোর থেকে পুজো নেওয়া শুরু হয়ে যায়।বিশাল লম্বা লাইন পড়ে যায় ভক্তদের।যতক্ষণ না লাইন শেষ হয় ততক্ষণ ধরে চলে ষোলআনা পুজো নেওয়া।এই একদিন এ সবাই বড় মা কে পুজোদিয়ে মনের ইচ্ছা জানায়। মায়ের এই স্নান যাত্রা দেখতে আসে বহু দূর থেকে আসা ভক্ত।
হাওড়া শহরে মাঘী পূর্ণিমা মানেই বড় মায়ের স্নান যাত্রা।
তিনি বসন্তের বিভিন্ন রোগ থেকে এলাকার মানুষকে শত শত বছর ধরে রক্ষা করে আসছেন। এমনটাই বিশ্বাস তাঁর অগণিত ভক্তের। তিনি হাওড়ার শালকিয়া অঞ্চলের ‘বড় মা’।
উত্তর হাওড়ার এক ঘনজনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। লৌকিক মতে এখানকার শীতলা দেবীরা সাত বোন। এঁদের মধ্যে হরগঞ্জ বাজার এলাকায় পাশে অরবিন্দ রোডের মন্দিরে রয়েছেন শীতলা দেবীর বড় বোন। যা ‘বড়মার মন্দির’ নামে খ্যাত। প্রতিদিন অগণিত ভক্ত সমাগম হয়। সাত বোনের মূর্তির কোনওটির কাঠ নির্মিত, কেউ হাঁড়িতে আঁকা। একমাত্র কয়েল বাগানের কয়েলেশ্বরী মা শীতলার মূর্তিটি পাথরের। বড় মায়েরা আসলে শীতলা দেবী। তাঁরা গুটিদানা জনিত রোগ অর্থাৎ হাম,বসন্ত ইত্যাদি রোগের দেবী বলে বিশ্বাস। শীতলা দেবীর উল্লেখ রামায়ণ মহাভারতেও রয়েছে। কথিত আছে, বিরাট রাজার রাজ্যে একবার বসন্ত রোগ দেখা দিলে বিরাট রাজা শীতলা দেবীর পূজা দিয়ে রেহাই পান।
সেই সময় দেবী অনার্য সমাজের দেবী বলেই পরিচিত ছিলেন। পরে সকল সম্প্রদায়ের কাছেই তিনি বসন্ত রোগের দেবী রূপে পূজিতা হন। হিন্দুর কাছে তিনি ‘শীতলা’, মুসলিমদের কাছে ‘বুড়াবুবু’, বৌদ্ধের কাছে ‘হারিট’। বসন্ত ঋতুতে পৃথিবী পৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে শুরু করে। ভক্তদের বিশ্বাস, এই সময় দেবী নিজে গঙ্গায় স্নান করে নিজে যেমন শীতল হন তেমনই পৃথিবীর মাটিকেও শীতল বা ঠাণ্ডা করেন। তাই শীতলা পূজার সঙ্গে বৎসরান্তে স্নান যাত্রার একটি পর্ব রয়েছে। এই স্নান যাত্রার প্রচলন সম্ভবত সালকিয়া অঞ্চলেই সিমাবদ্ধ।বড় মা ও তার সব বোনেরা মিলে গঙ্গাস্নানে বের হন।
এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সালকিয়া অঞ্চলে মেলা বসে ও শীতলা মায়েদের স্নান শেষে এলাকায় ভোগ বিতরণ হয়। অনেকেই সম্পূর্ণ উপবাস করে মায়ের স্নান শেষে রাতে পুজো দিয়ে ফল মিষ্টি খান। উৎসবের দিনে উপবাসীরা নতুন জামা কাপড় আর গামছা পরে মায়েদের বাঁশের পালকি বা চতুর্দোলায় কাঁধ দেন,অনেকে গঙ্গাঘাট অর্থাৎ বাঁধাঘাট থেকে বড়মার মন্দির পর্যন্ত দণ্ডী কাটেন। পরের দিন ষোলো আনার পুজো দিয়ে ব্রত সম্পূর্ণ করেন। আগে সাত জন মা আসতেন স্নান করতে।বর্তমানে তা আশি র ও অধিক।
আমাদের লেখা কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন।
ধন্যবাদ