পুরান মতে রাখি বন্ধন উৎসব
পুরাণে সুভদ্রা কৃষ্ণের ছোট বোন, কৃষ্ণ সুভদ্রাকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। তবে দ্রৌপদী ছিলেন কৃষ্ণের অতীব স্নেহভাজন। একদিন সুভদ্রা কিছুটা অভিমান ভরে কৃষ্ণকে প্রশ্ন করেন, এর কারণ কী। উত্তরে কৃষ্ণ জানান, যথা সময়ে এর কারন তুমি বুঝতে পারবে। কিছুদিন পর শ্রীকৃষ্ণের হাত কেটে রক্ত ঝরছিল। তা দেখে সুভদ্রা রক্ত বন্ধ করার জন্য কাপড় খুঁজছিলেন। কিন্তু কোথাও কোনও পাতলা সাধারণ কাপড় পাচ্ছিলেন না। এর মাঝে দ্রৌপদী সেখানে এসে দেখেন কৃষ্ণের হাত থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে। সেই ঘটনা দেখামাত্রই বিন্দুমাত্র দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে নিজের মুল্যবান রেশম শাড়ি ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাত বেধে দেন। কিছুক্ষণ পর রক্তপাত বন্ধ হয়। এবং দ্রৌপদীর চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে শ্রী কৃষ্ণের রক্ত ও বেদনা দেখে ।এতে কৃষ্ণ অভিভূত হয়ে যান। তিনি বোন সুভদ্রাকে ডেকে বলেন-এখন বুঝতে পেরেছ কেন আমি দ্রৌপদীকে এত স্নেহ করি? সুভদ্রা তখন বুঝতে পারলেন, ভক্তি ও পবিত্র ভালবাসা, শ্রদ্ধা কী জিনিস! দাদা কৃষ্ণের চেয়ে মুল্যবান বস্ত্র নিজের কাছে বেশি প্রিয় বলে নিজের বস্ত্র ছিঁড়তে পারেননি, দ্রৌপদীকে এর প্রতিদান দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। বহু বছর পরে, পাশাখেলায় কৌরবরা দ্রৌপদীকে অপমান করে তাঁর বস্ত্রহরণ করতে গেলে কৃষ্ণ দ্রৌপদীর সম্মান রক্ষা করে সেই প্রতিদান দেন। এইভাবেই কৃষ্ণ-দ্রৌপদীর মধ্যে রাখীবন্ধনের প্রচলন হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাখি বন্ধন উৎসব
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করতে রাখিকে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই বছরের ২০ জুলাই ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গের কথা ঘোষণা করে। জানানো হয়, এই আইন কার্যকরীর হবে ১৯০৫-এরই ১৬ অক্টোবর, বাংলায় ৩০ আশ্বিন। সেই সময়ে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় মানুষ সামিল হয়। ঠিক হয়, ওই দিন বাংলার মানুষ পরস্পরের হাতে বেঁধে দেবেন হলুদ সূতো বাঁধবেন। এই দিনকে মিলন দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কবিগুরু এই দিনটিকে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করার ডাক দেন। বাংলায় হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বকে ফুটিয়ে তুলতেই এই উদ্যোগ নেন রবীন্দ্রনাথ।
কিন্তু সেই রাখি বন্ধন উৎসব শ্রাবণ মাসে বা পূর্ণিমা, কোনওটাতেই হয়নি। শুধু বোনেরা ভাইদের নয়, এই দিন প্রত্যেক মানুষের মধ্যের একতাই ছিল রাখি বন্ধনের মূল বিষয়। এই রাখিবন্ধন উৎসবে সম্প্রীতি যে ভাবে জায়গা করে নিয়েছিল, রবীন্দ্রনাথ এই রাখি বন্ধন উৎসব নিয়েই গান লিখেছিলেন, বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল। পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, হে ভগবান।