মায়াপুরের ইসকন মন্দিরের ৫ কিলোমিটার আগে রাজাপুরের জগন্নাথ দেবের মন্দির। জানা যায়, শুভ শক্তির সূচনার জন্য জগন্নাথ দেবকে ওড়িশা থেকে আনেন শবর জাতির মানুষ। তাঁকে রাজাপুরে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তারপর বেশ কয়েকদিন বন্ধ ছিল জগন্নাথের আরাধনা৷ পরবর্তীকালে ফটিকচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির হাত ধরে ফের পুজো চালু হয়৷প্রথমে সকালে হয় মঙ্গল আরতি,তারপর ভোগ নিবেদন ও তারপর আরও অনেক রীতির মাধ্যমে রথ টানা সূচনা হয়। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা রথে চড়ে রাজাপুর জগন্নাথ মন্দির থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের ইসকন চন্দ্রোদয় মন্দিরে ভক্তদের সাথে পৌঁছান সন্ধ্যেবেলা । কাঠের রথগুলির নাম নন্দ ঘোষ, পদ্ম ধ্বজ ও তালধ্বজ, এই তিনটি রথকে ফুলের মালা দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়।
১৯৭৯ সালে ইসকন মন্দির কর্তৃপক্ষ রাজাপুরের জগন্নাথের দায়িত্ব নেয়। সেই থেকে শুরু হয় পুজো। এরপর যতদিন গড়িয়েছে জাঁকজমক বেড়েছে জগন্নাথের আরাধনায়। রথের ঠিক একমাস আগে মায়াপুরে ইসকনে অনুষ্ঠিত হয় জগন্নাথের স্নানযাত্রা। কথিত আছে, স্নানযাত্রার পর জগন্নাথ দেব জ্বরে কাবু হয়ে গৃহবন্দি হয়ে পড়েন। রথের আগে ভক্তরা আর জগন্নাথ দেবের দর্শন পান না।
রথের দিন বিকেলে কম্বল মুড়ি দিয়ে গৃহবন্দি জগন্নাথ রাজবেশে রাজরথে চেপে রাজাপুর থেকে বেরিয়ে ইসকন মন্দির অস্থায়ী মাসির বাড়িতে যান,ইসকনের চন্দ্রোদয় মন্দিরে। উলটো রথে তিনি আবার ফিরে যান রথে চড়ে রাজাপুরে। তিনটি রথে তিনজন থাকেন,মাঝের ৭ দিন ইসকনে আয়োজিত হয়ে থাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান।
স্নানযাত্রা উপলক্ষে বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই ভিড় শুরু হয়ে যায় মায়াপুরে। দেশ বিদেশের মানুষ হাজির হন। তবে সকাল থেকেই ইসকনের মন্দির থেকে শুরু করে গোটা মায়াপুরে শুধু দেশি-বিদেশি ভক্তদের দেখা যায়।
প্রতি বছর বাড়তি রোজগারের আশায় রথের মেলায় পাঁপড় ভাজা, পুতুল ও জিলিপির মতো বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় দোকান তৈরি করে ব্যবসা করেন এলাকার গরিব মানুষজন।