সনাতনী শাস্ত্রে পাঁঠা বলির কোনো উল্লেখ নেই। উল্লেখ রয়েছে ছাগ বলির কথা।
এই ছাগ মানে কিন্তু ছাগল বা পাঁঠা নয় নয়,বরং এখানে ‘ছাগ’ হলো ষড়রিপু ।
ষড়রিপুর অর্থ
’কাম’, ‘ক্রোধ’, ‘লোভ’, ‘মোহ’, ‘মদ’ (অর্থাৎ, হিংসা), ‘মাৎসর্য’ এইগুলিই একএে ষড়রিপু বলা হয়’ ; প্রকৃত অর্থে এই ষড়রিপুকেই বলি দিতে হয়।
বিশুদ্ধ বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় “ষড়” শব্দের অর্থ হল – “ছয়” এবং “রিপু” শব্দের অর্থ হল – “শত্রু”। অর্থাৎ বিভিন্ন বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে “ষড়রিপু” হল – “সাধারণ প্রাণীদেহের ‘ছয়টি শত্রু’, যা প্রতিটি প্রাণীগণের ক্ষেত্রে ধ্বংসের প্রতীক। ছাগ বলি দেওয়ার অর্থ ষড়রিপুগুলি ভগবানের কাছে ত্যাগ করা। কিন্তু এর প্রকৃত কারণ, উদ্দেশ্য না বুঝেই আমরা নিরীহ প্রাণীদের হত্যায় মেতে উঠি, মায়ের কাছে নিরীহ প্রাণী বলি দিয়ে আমরা নিজেরাই পাপের ভাগিদার হচ্ছি যা পুণ্য নয়, কেবল পাপের ভাগীদারই করে আমাদের!
সংস্কৃততে একটি শব্দেরই অনেক অর্থ থাকতে পারে। যেমন “জীঘ্রং” শব্দের একটি অর্থ হত্যা করা এবং আরেকটি অর্থ দান করা। তদ্রুপ “ছাগ” শব্দের একটি অর্থ ছাগল, আরেকটি অর্থ ষড়রিপু।
একটি শ্লোকের প্রসঙ্গ তুলে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যাক
“যুধিষ্ঠিরস্য য়া কন্যা নকুলেন বিবাহিতা…”
এই শ্লোকটি যদি কোনো সাধারণ মানুষকে শোনানো হয়, তাহলে তিনি এর অর্থ করবেন, যুধিষ্ঠিরের মেয়েকে চতুর্থ পান্ডব নকুল বিয়ে করেছে।কিন্তু না, তা একদমই নয়।
শ্লোকটির প্রকৃত অর্থ কী?
চলুন, তা জানার চেষ্টা করি।যিনি সর্বদাই স্থির, তিনিই যুধিষ্ঠির। এখানে “যুধিষ্ঠির” মানে হিমালয় পর্বতকে বোঝানো হয়েছে আর হিমালয়ের কন্যা হচ্ছেন পার্বতী। পার্বতীর সাথে নকুলের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে।
ন কুল = অকুল;
এখানে নঞ-তৎপুরুষ সমাস হচ্ছে। যাঁর কোনো কুল নেই, তিনিই হচ্ছেন নকুল অর্থাৎ মহাদেব শিব। তাহলে এখানে “নকুল” মানে চতুর্থ পান্ডব নয়।
অর্থাৎ শ্লোকটির যথাযোগ্য অর্থ হচ্ছে, হিমালয়ের কন্যা পার্বতীর সহিত মহাদেব শিবের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। এইভাবেই তো সংস্কৃত শব্দের ভুল অর্থ সাজিয়ে, বেদের ভুল অনুবাদ করে বেদের মধ্যে “গোমাংস ভক্ষণ”-এর প্রসঙ্গ পর্যন্ত নিয়ে এনেছে বিধর্মীরা!
এরকম হাজারো উদাহরণ রয়েছে। সনাতনী সংস্কৃতিকে বিকৃত করার জন্য বিধর্মীরা সংস্কৃত শব্দের ভুল অর্থ বের করে এবং আমরা, সনাতনীরাও সংস্কৃত না জানার দরুন তাদের ফাঁদে পা ফেলি।
সংস্কৃত না বোঝার কারণে সনাতনী সমাজে আরও অনেক কুসংস্কার তৈরি হয়েছে। যেমনঃ-
১. শিব লিঙ্গ-এর অর্থ শিবের প্রতীক, মহাদেব শিবের লিঙ্গ নয়।
২. তেত্রিশ কোটি দেবতা মানে তেত্রিশ প্রকার দেবতা, সংখ্যায় ৩৩ কোটি দেবতা নয়।
সকল সনাতনী বন্ধুর নিকট অনুরোধ
দয়া করে কোনো উৎসবে পশুহত্যা করবেন না বা এই ঘৃণ্য কাজকে সমর্থন করবেন না। যদি কোথাও পশুহত্যা দেখতে পান, তাহলে অবশ্যই তার বিরোধ করুন। মনে রাখবেন, প্রাণীহত্যা সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে। প্রাণীহত্যা আসলে আরবীয় ও বাম মার্গীয় সংস্কৃতি। সত্যের জয় হোক!