দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অদূরেই আদ্যাপীঠে হিন্দু-তীর্থ আদ্যমায়ের মন্দির। শ্রী অন্নদা ঠাকুর মানুষকে প্রেম ও আদর্শে দীক্ষিত করতে স্বপ্নে দেখা এই মন্দিরটি গড়েন ১৯২১ সালে। তিন চূড়োওয়ালা তিন ধাপে গড়া মন্দির। প্রথম ধাপে উপবিষ্ট শ্রী রামকৃষ্ণ, দ্বিতীয় ধাপে ইডেন গার্ডেনের ঝিলে পাওয়া আদ্যামায়ের আদলে পদ্মাসনে শায়িত শিবের বুকে অষ্টধাতুর দেবীমূর্তি। আর তৃতীয় ধাপে রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তি। সারা দিনে সকাল ও সন্ধায় মাত্র কিছু সময়ের জন্যই মূল মন্দিরটি খোলা থাকে। মন্দিরে প্রতিদিন দুপুরে ভক্তদের জন্য মেলে অন্নপ্রসাদ।
‘পাতানো মা নয়, জন্বজন্বান্তরের মা এ বুঝেছি।’
যে মার কোলে স্থান পেয়েছে অনাথ ছেলেরা, অনাথ মেয়েরা, স্বামী পুত্রহীনা বিধবা মায়েরা, বানপ্রস্থ আশ্রমের বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা, সাধক ও সাধিকাদের জন্যও গড়ে উঠেছে পৃথক পৃথক আবাসস্থান, আবার দেশবাসীর জন্য দাতব্য চিকিৎসালায়, ভ্রাম্যমান চিকিৎসালয়, এক্সরে ক্লিনিক, ই.সি.জি ক্লিনিক, দন্ড ও চক্ষু বিভাগসহ, দৈনিক বিনামূল্যে তিন চারশো নরনারায়ণ সেবা, ভাবতে অবাক লাগে কী নেই এই আদ্যাপীঠে। সকলের অবারিত দ্বার। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লোক এ মাকে ডেকে কত দুরারোগ্যব্যাধি থেকে মুক্তিলাভ করছে। এইসব কার সাধনা। কোন মহামানবের প্রাণে এসব আর্ত মানুষের ক্রন্দর ধ্বনিত হয়েছিল? এ মানবদরদী মহামানব হলেন আমাদের চট্টগ্রামের বীর সন্তান দক্ষিণেশ্বর রামকৃষ্ণ সংঘ প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমৎ অন্নদার ঠাকুর। তাঁকে একদিন রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন চলো আমার সঙ্গে তা হলে তোমার সকল দুঃখের অবসান হবে। কিন্তু এই সময় হাজার হাজার নরনারীর কাতন আবেদন ছিল ঠাকুর তুমি একা রামকৃষ্ণদেবের সঙ্গে যেও না, আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাও। আমরা সংসারতাপে তাপিত।
পৃথিবীর মানুষের কাতর আবেদন ঠাকুরকে আর নিজের মুক্তির কথা চিন্তা করতে দিলনা। আর্ত মানুষেল জন্য এই মানবদরদী মহাপুরুষ গড়ে তুললেন এই আদ্যাপীঠ কেন্দ্র। কী মাতৃসাধক! যাঁর সাধনায় তৃপ্ত হযে জগৎজননী তাঁর সন্তানদের পূজার বিধান দিয়েছিলেন খাওয়ার সময় শুধু বলবে মা তুমি খাও আর কাপড় চোপড় পরার সময় বলবে মা তুমি পর। কী সহজ সরল পূজার বিধি। মা জানতেন সংসারে আত্বীয় পরিজন সকলের সেবা করার পর তাঁর সন্তানদের সময় কোথায়। তাই করুণাময়ীর এই রকম সহজ সরল পূজার বিধান। মা শুধু বলেছিলেন যদি কেউ আমার সামনে আদ্যাস্তব পাঠ করে আমি বিশেষ সন্তুষ্ট হই। এ মাতৃকৃপা যে মহামানবের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি উনি ছিলেন সমন্বয়ের প্রতীক। মন্দির দেখলেই বোঝা যায় একই মন্দিরে গুরু কালী ও হরি। এমনি সংঘগুরু অন্নদাঠাকুর নিজের হাতে বসিয়েছিলেন। হিন্দুদের ত্রিশূল, মুসলমানদের চাঁদ, খ্রীষ্টানদের ক্রশ ও বৌদ্ধদের হাতপাখা। সারা বিশ্ব আজ আদ্যাপীঠ ও অন্নদাদাকুরকে নিয়ে মুখর। শুধু কি তাই তিনি বিশ্বের সকলকে ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য প্রতিষ্ঠানের সকল সদস্য ও কর্মীদের নামের শেষে ভাই কথাটা ব্যবহার করতেন। তাই আসুন সমস্ত দ্বন্দ্ব ভেদাভেদ ভুলে অন্নদা ঠাকুরের সমন্বয়ের পতাকা তলে একত্রিত হই। একত্রিত হয়ে সাম্যের জয়গান করি।