পৌষমাসের শেষ দিনটি পৌষসংক্রান্তি। এই তিনটি দিন বাঙালির পৌষপার্বণ র দিন। বহুকাল ধরে এই দিনটি কৃষিজীবী বাঙালির বড় আনন্দের নতুন ধানের উৎসব। এর ঠিক আগের দিন গ্রামবাংলার গেরস্তবাড়ির উঠোন পরিষ্কার করে নিকিয়ে সেখানে চালগুঁড়ি দিয়ে চমৎকার সব আলপনা দেওয়া হত। যার মধ্যে কুলো, সপ্তডিঙা মধুকর, লক্ষ্মীর পা, প্যাঁচা এবং অবশ্যই ধানের ছড়ার আলপনা বেশি প্রচলিত ছিল। মা লক্ষ্মী ঘরে আসবেন বলেই হয়তো করা হত এত তোড়জোড়। এ-বাংলায় এই আচারটিকে লোকায়ত ভাষায় আউনি-বাউনি পুজোও বলে।কয়েকটি পাকা ধানের শিষ কিংবা এর অভাবে দু’-তিনটি খড় দিয়ে বিনুনি করে, ভক্তিভরে পুজো করে, গেরস্তবাড়ির বিভিন্ন জায়গায় সৌভাগ্যের চিহ্ন হিসেবে তাদের একটি করে নিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। ভাবা হয় এই ভাবেই সৌভাগ্য চিরতরে বাঁধা পড়ে থাকবে। অনেক সময় ধানের সঙ্গে নরম আমপাতা, রূপসী মুলোফুল বা স্নিগ্ধ হলুদ সরষেফুলও গেঁথে দেওয়ার চল আছে। এই বন্ধনের অবশ্যই আর একটি মানে হল ঘরের মানুষটিকে কিছু দিন ঘরের মধ্যেই বেঁধে রাখা। আর এটি বাঁধার সময় মুখে মুখে ছড়া কাটা হয়, ‘আউনি বাউনি চাউনি/তিন দিন কোথাও না যেও/ ঘরে বসে পিঠে-ভাত খেও।’ অবশ্য জায়গা বিশেষে এটি বদলে বদলেও যায়। এই ছড়াটির ভেতরে লুকিয়ে থাকা অর্থের খোঁজ করতে গিয়ে বিশিষ্ট ভাষাতাত্ত্বিক কামিনীকুমার রায় বলেছেন, ‘আওনি— লক্ষ্মীর আগমন, বাওনি— লক্ষ্মীর বন্ধন বা স্থিতি আর চাওনি— তাঁহার নিকট প্রার্থনা।’
পৌষের শেষে কৃষকদের ঘরে ওঠে হেমন্ত ও শীতকালীন ফসল। বিশেষত ফসল বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে ধান, গম, নতুন গুড়, তিল ইত্যাদি। আর তার সঙ্গে রয়েছে নারকেল, ক্ষীরসহ অন্যান্য ১২ মাস পাওয়া যায় নানা সামগ্রি। নতুন ফসল ঘরে তোলা মানে নতুন করে যেন লক্ষ্মীর বরলাভ। অনটনের সংসারে স্বল্প সময়ের প্রাচুর্য। একটু মনের মাধুরী মিশিয়ে তাই নতুন ওঠা চাল আর গুড় দিয়ে কৃষিজীবী গ্রামবাংলার মেয়েরা তৈরি করে ফেলেন বাহারি স্বাদের পিঠে। পৌষ মাসে ঘরে ঘরে নতুন চালের সেই উৎসব বঙ্গদেশে এভাবেই রূপ পায় ‘পিঠে সংক্রান্তি’-র।
পৌষ মাসে যে সকল পিঠে হয় সেগুলি হলো।দুধ পুলি,রস পুলি,পাটিসাপটা, চন্দ্রপুলি, পূরণপুলি , গোকুল পিঠে,ক্ষীরসাপটা, রেশমিপিঠে,ভাজা পিঠে, সরু চাকলি ইত্যাদি।
পৌষপার্বণ সম্পর্কে পরে কেমন লাগলো অবশ্যই আমাদের comment box এ জানাবেন। ধন্যবাদ।