হিরণ্যায়েন সবিতা রথে দেব যাত্রী ভুবানানি পশ্যন”।
সূর্য প্রণাম মন্ত্র –
”ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম । ধান্তারীং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।।”
সূর্য নাম মন্ত্র হল-
”ওং ঘৃণি সূর্যায় নমঃ”।
হিন্দুধর্মের বিভিন্ন দেবদেবীর মধ্যে প্রধান হলেন সৌর দেবতা (Surya Deb)। তিনি কশ্যপ ও অদিতির পুত্র। আবার কোনো কোনো পুরাণ মতে তিনি ইন্দ্রের পুত্র। কোন দেবতাকে খালি চোখে সামনা সামনি দেখা না গেলেও কিন্তু সূর্যদেবকে আমরা আকাশের দিকে তাকালেই দেখাতে পাই। সপ্তাহের সাতদিনের মধ্যে রবিবারটা রাখা থাকে সূর্য দেবতার জন্য।
পুরাণ মতে শোনা যায়, শনিদেবের পিতা হলেন এই সূর্যদেব। এবং এর সাথে তিনি যোমরাজ এবং যমুনা দেবীর পিতাও। সূর্যলোকে অবস্থানরত এই সূর্যদেবকেও কিন্তু একবার শনিদেব তাঁর বক্রদৃষ্টি দিয়েছিলেন। তবে হিন্দু মতে সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির দেবতা হিসাবে সূর্যদেবকে মান্য করা হয়। আবার সমস্ত শক্তির উৎস বলেও মনে করা হয় সূর্যদেবকে।
সূর্যদেবের ধ্যান মন্ত্র
”ওঁ রক্তাম্বুজাসনমশেষগুণৈসিন্ধুং, ভানুং সমস্তজগতামধিপং ভজামি।
পদ্মদ্বয়াভয়বরান্ দধতং করাব্জৈ- র্মাণিক্যমৌলিমরুণাঙ্গরুচিং ত্রিনেত্রম্।।”
এতো গেল পুরাণ, মন্ত্র এসবের কথা, এইবার একটু প্রাক্টিক্যাল হওয়া যাক! সূর্য প্রনামের মন্ত্র উচ্চারণ আমাদের মস্তিস্ককে উদ্দিপিত করে, সাথে সাথে সূর্য প্রনাম যোগ ব্যায়াম করলে মন ও শরীর সুস্থ থাকে
যোগ ব্যায়াম – সূর্য নমস্কার বা সূর্য প্রণামের পদ্ধতি
সূর্য নমস্কার বা সূর্যের উপাসনা হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। সূর্যদেব সংসৃষ্ট, পরিবর্ধিত ও পুঞ্জীভূত রোগের জীবাণু থেকে বস্তুসমূহকে বিশুদ্ধ করে। সূর্য নমস্কার আসন ও ব্যায়ামের সমন্বয়ে সৃষ্ট। এটি অভ্যাসের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, পরিপাকযন্ত্র, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস এবং স্নায়ুমণ্ডলীর সবলতা, যকৃতের গোলমাল, বহুমুত্র, সর্দিকাশি, হাঁপানি, বুক ধড়ফড়ানি, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের ক্রিয়াবৈষম্য, মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের দুর্বলতাজনিত রোগসমূহ, সামান্য শ্রমে বেশি কাতরতা ইত্যাদি নিরাময় হয়।
ভোর বেলায় খালিপেটে সূর্য নমস্কার করা সবচেয়ে ভাল। সূর্য নমস্কারের সহজ ও কার্যকর আসন ভঙ্গীগুলি সুন্দর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ক্রমানুসারে শুরু করা যাক।
সূর্য নমস্কারের দুটি ভাগ রয়েছে, ১২ টি যোগের ভঙ্গিমা মিলে একটি সূর্য প্রণাম সম্পন্ন হয়। দ্বিতীয়টি সম্পূর্ণ করার জন্য একই নিয়মে প্রথমার্ধের আসন ভঙ্গীগুলি পুনরায় করা হয়৷ শুধুমাত্র ডান পায়ের বদলে বাম পা ব্যবহার করা হয়৷ (নীচের ৪ এবং ৯ নং আসন ভঙ্গী)। আপনি সূর্য নমস্কার করার অনেক রকম নির্দেশ দেখতে পারেন, সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলুন। সুস্বাস্থ্য লাভ ছাড়াও সূর্য প্রণামের দ্বারা পৃথিবীর জীবকুলের প্রাণস্বরূপ সূর্যকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাবার সুযোগ পাই।
১. প্রণাম আসন:
আপনার যোগের ম্যাটের প্রান্তে দাঁড়ান, দুই পা জোড়া করুন এবং আপনার দেহের ওজন দুপায়ের ওপর সমান ভাবে রাখুন। বুকের ছাতি প্রসারিত করুন এবং দুই কাঁধ শিথিল করুন। শ্বাস নেওয়ার সঙ্গে দুদিক থেকে হাত তুলুন এবং শ্বাস ছাড়ার সময় দুই হাত বুকের কাছে নমস্কারের ভঙ্গীতে আনুন।
২. হস্ত উত্তানাসন:
শ্বাস নিন, দুহাত ওপরে তুলে পিছন দিকে নিন। হাতের বাইসেপ্ যেন কানকে স্পর্শ করে থাকে। এই ভঙ্গীতে সমস্ত শরীরকে – পায়ের গোড়ালি থেকে হাতের আঙ্গুলের ডগা পর্যন্ত যথাসম্ভব স্ট্রেচিং করুন।
এই প্রসারণ আরো ভালভাবে কি করে করা যায়? আপনি পেলভিস্ সামনের দিকে অল্প ঠেলতে পারেন। নিশ্চিত করুন আপনি পিছন দিকে বাঁকার চেষ্টা না করে আঙ্গুলের সাহায্যে স্ট্রেচিং করছেন।
৩. হস্ত পদাসন:
শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মেরুদন্ড সোজা রেখে কোমর থেকে সামনের দিকে ঝুঁকুন; শ্বাস পুরোপুরি ছাড়া হলে মেঝেতে পায়ের দুপাশে দুই হাত রাখুন।
এই প্রসারণ কি করে আরো ভালভাবে করা যায়? মেঝেতে দুই হাত রাখার জন্য যদি প্রয়োজন হয় আপনি হাঁটু ভাঁজ করতে পারেন। এবার হাল্কা করে হাঁটু সোজা করার চেষ্টা করুন। যতক্ষণ পর্যন্ত আসন শেষ না হয় এই অবস্থায় হাত স্থির রাখা এবং না নড়ানো ভাল।
৪. অশ্ব সঞ্চালন আসন:
শ্বাস নিতে নিতে, ডান পা যতখানি সম্ভব পিছনের দিকে ঠেলুন; ডান হাঁটু মেঝের ওপর রাখুন এবং ওপরে তাকান।
এই ভঙ্গী আরো ভালভাবে কি করে করা যায়? নিশ্চিত করুন বাঁ পা দুই হাতের তালুর ঠিক মাঝখানে যেন থাকে।
৫. দন্ডাসন:
শ্বাস নিন, বাঁ পা ডান পায়ের মত পিছনে নিয়ে শরীরকে এক সরল রেখায় আনুন।
এই ভঙ্গী আরো ভালভাবে কি করে করা যায়? দুই হাত মেঝের সঙ্গে লম্বালম্বি করে রাখুন।
৬. অষ্টাঙ্গ নমস্কার:
হাল্কা ভাবে দুই হাঁটু মেঝেতে রেখে শ্বাস ছাড়ুন। নিতম্ব সামান্য পিছনে নিন। সামনের দিকে শরীর আনুন, বুক এবং চিবুক মেঝেতে রাখুন। নিতম্ব সামান্য উপরে তুলুন। দুই হাত, দুই পা, দুই হাঁটু, বুক এবং চিবুক (দেহের আটটি অংশ) মেঝেতে স্পর্শ করেছে।
৭. ভুজঙ্গাসন:
বুক থেকে দেহের উপরিভাগ সাপের ভঙ্গিতে তুলুন। এই ভঙ্গীতে কনুই ভাঁজ করে রাখতে পারেন, দুই কাঁধ দুই কানের থেকে দূরে এবং দৃষ্টি উপরের দিকে থাকবে।
এই ভঙ্গী আরো ভালভাবে কি করে করা যায়? যখন শ্বাস নিচ্ছেন, বুক সামনের দিকে হাল্কা করে ঠেলতে চেষ্টা করুন। শ্বাস ছাড়ার সময় নাভিকে নীচের দিকে ঠেলুন। জোর করে কিছু করবেন না, যতটুকু আপনার পক্ষে সম্ভব, তাই করুন।
৮. পর্বতাসন:
শ্বাস ছাড়ার সময় নিতম্ব এবং টেলবোন ওপরে তুলুন, বুক নীচের দিকে ইংরাজী অক্ষর V –এর উল্টো ভঙ্গীতে থাকবে।
এই ভঙ্গী আরো ভালোভাবে কি করে করা যায়? সম্ভব হলে, গোড়ালি মাটিতে রাখুনএবং হাল্কা করে টেলবোন ওপরে তুলুন।
৯. অশ্বসঞ্চালন আসন:
শ্বাস নিয়ে ডান পা সামনের দিকে এনে দুই হাতের মাঝখানে রাখুন, বাঁ হাটু মেঝেতে, নিতম্বকে নীচের দিকে চাপ দিন এবং দৃষ্টি রাখুন ওপরে।
এই ভঙ্গী আরো ভালোভাবে কি করে করা যায়? ডান পা দুই হাতের ঠিক মাঝখানে রাখুন এবং ডান কাফ মেঝের সঙ্গে লম্বালম্বি রাখুন। এই ভঙ্গীতে সঠিক স্ট্রেচিং -এর জন্য নিতম্বকে মেঝের দিকে হাল্কাভাবে চাপ দিন।
১০. হস্ত পদাসন:
শ্বাস ছেড়ে, বাঁ পা সামনে আনুন। হাতের তালু মেঝেতে রাখুন। প্রয়োজন হলে হাঁটু বাঁকাতে পারেন।
এই ভঙ্গী আরো ভালোভাবে কি করে করা যায়? হাল্কাভাবে হাঁটু সোজা করুন এবং যদি সম্ভব হয়, চেষ্টা করুন নাক যেন হাঁটুতে স্পর্শ করে; শ্বাস নিতে থাকুন।
১১. হস্ত উত্তানাসন:
শ্বাস নিতে নিতে মেরুদন্ডকে ওপরে তুলুন, দুহাত উপরের দিকে তুলে সামান্য পিছন দিকে নিন, নিতম্ব হাল্কা ভাবে বাইরের দিকে ঠেলে রাখুন৷
এই ভঙ্গী আরো ভালোভাবে কি করে করা যায়? আপনার দুহাতের বাইসেপ যেন কানকে স্পর্শ করে; পিছন দিকে হেলে যাওয়ার চেয়ে সটান হওয়া নিশ্চিত করুন।
১২. তদাসন:
যখন শ্বাস ছাড়ছেন, প্রথমে শরীর সোজা করুন, তারপর দুই হাত নীচে আনুন। এই ভঙ্গীতে বিশ্রাম নিন, শরীরের মধ্যে যে অনুভূতি হচ্ছে লক্ষ্য করুন।