আমরা ছোট থেকে শুনে আসছি যে পুজোর আগে কুল খেলে পরীক্ষা তে ফেল করে।কিন্তু বর্তমান সমাজে এটা কে কুসংস্কার বলে অভিহিত করা হচ্ছে।আসল কারণ কিন্তু একটু অন্য রকম এই কুল খেতে বারুন করার মধ্যে আছে বিশেষ কারণ।আর এটা কোনো কুসংস্কার ও নয়।
কৃষিপ্রধান রাজ্য বাংলা। তাই যে কোনও ফসলই প্রথমে দেবতাকে উৎসর্গ করার রীতি রয়েছে। এমনকী নতুন ধান উঠলেও তা নিয়ে উৎসব পালিত হয়। শীতেরই ফল কুল তাই মা কে দিয়েই আমরা তা খেয়ে থাকি।
শাস্ত্র মতে দেবী সরস্বতীকে তুষ্ট করতে ব্যাসদেব দীর্ঘদিন তপস্যা করেছিলেন। সে তপস্যার আগে দেবী সরস্বতী তাঁর তপস্যাস্থলের পাশেই একটি কুল বীজ রেখে একটি শর্ত দিয়েছিলেন। সেই শর্তানুযায়ী বলা ছিল, যতদিন না কুল বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বড় গাছ হবে এবং সেই গাছের ফল পেকে ব্যাসদেবের মাথার উপর পড়বে। ততদিন অবধি দেবীর তপস্যা করতে হবে।তারপরেই দেবী তাঁর তপস্যায় তিনি তুষ্ঠ হবেন। সেই শর্তানুযায়ী, ব্যাসদেব তপস্যা শুরু করেন। যেদিন গাছের নতুন ফল তাঁর মাথায় পড়ে, তিনি বুঝতে পারেন দেবী তাঁর তপস্যায় তুষ্ঠ হয়েছেন। বিশেষ দিনটি ছিল পঞ্চমী। সেই দিন দেবীকে কুল নিবেদন করে ব্যাসদেব ব্রহ্মসূত্র রচনা আরম্ভ করেছিলেন। সেইজন্যই শ্রীপঞ্চমীর দিনই সরস্বতী দেবীকে নিবেদন করার পর কুল খাওয়া হয়।আবার শোনা যায় মা সরস্বতী যেদিন ব্যাসদেব কে তপস্যার জন্য আশীর্বাদ করতে ছুটেছিলেন শাস্ত্রে বলা হয় সেই দিনটি ছিল তার সঙ্গে বিষ্ণুর বিবাহের তিথি। দেবী ছুটলেন ভক্তকে আশীর্বাদ করতে। আর বিষ্ণু যোগ বলে সমস্ত টা জানতে পেরে তখনই বর রূপে চলে গেলেন। পাত্রী হিসেবে তখন দেবী সরস্বতীর ডাক পড়লো। কিন্তু দেবী তো নেই সবকিছু জেনেও বিষ্ণু প্রত্যাখ্যান করলেন দেবীকে। দেবী ফিরে এসে সমস্ত টাই জানতে পারলেন রাগে দুঃখে অপমানে তিনি বিবাহের বস্ত্র পরিত্যাগ করলেন এবং হলেন শুভ্রবসনা। সেই থেকে দেবীর শুভ্র বসন। তিনি সকল জ্ঞানের আধার।তিনি বাগদেবী। একজন নারী যে শুধু নিজের পরিচয় ছাড়াও পরিচিত হতে পারে তাই তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছিলেন।দেবীর শুভ্রবসনা হওয়ার আরো একটি কারণের কথা বলা হয়। তিনি হচ্ছেন জ্ঞানের দেবী। জ্ঞান হয় সবসময় শুদ্ধ ও নির্মল।
আবার, প্রবীণেরা অকালে কাঁচা /কষযুক্ত কুল খেয়ে বাচ্চাদের শরীর খারাপ হতে পারে, এই উপলব্ধি থেকে পরিপক্ব হবার আগে কুল খেতে বারন করে দেন । তাই বলা যায়, সরস্বতী পূজার আগে কুল খাওয়া বা না খাওয়া কোনো শাস্ত্রগত নির্দেশ নয়, অথবা কোন কুসংস্কারও নয়। জ্ঞান অর্জনের একটি প্রক্রিয়া মাত্র। বসন্তকালে বিভিন্ন রকমের রোগ দেখা দেয় চারিদিকে। সর্দি-কাশি, জ্বর, পেটের সমস্যা এই সময়ে ঘরে ঘরে লেগে থাকে। আধ পাকা বা কাঁচা কুল বসন্তকালে খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও এই ফল মারাত্মক টক হয় যা দাঁতের জন্যে ক্ষতিকারক।তবে এই সমস্ত লোকাচার বা শাস্ত্রের নিয়ম ছোটরা বুঝবে না বা মানবে না। তাই তাদেরকে বাড়ির বড়রা ভয় দেখান এই বলে যে সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেলে পরীক্ষায় পাশ করা যায় না।
আমাদের লেখা কেমন লাগলো অবশ্যই comment box এ জানাবেন। ধন্যবাদ