জগন্নাথ দেবের মূর্তির আদল ঘিরে রয়েছে বহু কৌতূহল। সত্যযুগে এক রাজা ছিলেন ইন্দ্রদ্যুন্ম। পুরীর মন্দির তৈরির সঙ্গে তাঁর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
তাঁর ইচ্ছা ছিল যে তিনি বিষ্ণুধাম বর্তমান পুরী তে একটি বিষ্ণু মন্দির গড়বেন। এ জন্য তিনি প্রজাপতি ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলেন। প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছ থেকে ইন্দ্রদ্যুন্ম জানতে পারেন যে ওই এলাকার বাঁকেমুখ নামের এক জায়গা থেকে তিনি মূর্তি তৈরির কাঠ পেয়ে যাবেন। ব্রহ্মার পরামর্শে রাজা বিষ্ণুর কঠিন ধ্যান করে জানতে পারেন পুরীর কাছের সমুদ্রে নিম গাছের গুঁড়ি ভেসে আসবে। সেই কাঠের গুঁড়ি দিয়েই বিগ্রহের নির্মাণ হবে।
বিষ্ণুর কথামতো নিম গাছের গুঁড়ি এনে মূর্তি নির্মাণের কাজ তো শুরু হলো, কিন্তু কাটতে যেতেই বারবার ভেঙে যেতে লাগল সেই গুঁড়ি। একমাত্র সেই নিমকাঠেই তৈরি হতে হবে এই বিষ্ণু মন্দিরে বিষ্ণুর মূর্তি। এছাড়াও মূর্তি নির্মাণের জন্য বিশ্বকর্মাকে স্থির করা হল। এরপর ব্রহ্মার উপদেশ মতো বিশ্বকর্মা এলেন ইন্দ্রদ্যুন্মের কাছে। তবে তিনি জানান দিলেন না নিজের আসল পরিচয়। মূর্তির কারিগর হিসাবে অনন্ত মহারাণার ছদ্মবেশে তিনি প্রবেশ করলেন রাজসভায়।
বিশ্বকর্মা শর্ত দিলেন, তিনি মূর্তি নিখুঁত গড়ে দেবেন, তবে নিজেকে এক ঘরে বন্ধ রেখে কাজ করবেন। মূর্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেই ঘর কেউ খুলতে পারবেন না। শর্তে রাজি হলেন রাজা। এর পরবর্তীকালে মূর্তি নির্মাণের কাজ শুরু করে দিলেন বিশ্বকর্মা। এদিকে, মূর্তি কেমন হয়েছে ,তা দোর জন্য উৎসুক রাজা ইন্দ্রদ্যুন্ম। এমন অবস্থায় তিনি ধৈর্য ধরে না রাখতে পেরে খুলে দিলেন মূর্তি নির্মাণের ঘর। দরজা খুলতেই দেখেন নির্মাণ ঘরে সমস্ত আওয়াজ স্তব্ধ হয়ে গেল। সেখানে নেই কেউ। একজন কারিগরও সেখানে নেই।
এরপরই রাজা দেখলেন জগন্নাথ দেবের মূর্তি অর্ধ সমাপ্ত। মূর্তির হাত ও পায়ের অসমাপ্ত অংশ দেখে মুষড়ে পড়লেন রাজা। বিশ্বকর্মার শর্ত রাজা না মানায় রুষ্টহয়ে মূর্তি মাঝপথে রেখে চলে যান বিশ্বকর্মা। বিষ্ণুর জগন্নাথ দেব অবতারকে পরবর্তীকালে ব্রহ্মা পুজো করার পরামর্শ দেন রাজাকে। জানান, বিষ্ণু স্বয়ং খুশি এই মূর্তির আদলে। তারপর থেকে জগন্নাথ দেবের সেই রূপকেই পুজো করা হয় পুরীতে।
সংগৃহীত
আমাদের লেখা কেমন লাগলো অবশ্যই comment box এ জানাবেন।