কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে দেবী জগদ্ধাত্রীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়।দেবীর বাম হাতে শঙ্খ ও শার্ঙ্গধনু, দক্ষিণ হাতে ও পঞ্চবাণ। সংস্কৃত, বাংলা ও অসমিয়াতে জগদ্ধাত্রী কথার অর্থ হল যিনি জগৎকে ধরে রাখেন যিনি।মা এর রূপ গাত্রবর্ণ সোনালী সূর্যের মতো।এই পুজো চার দিন ধরে পালন করা হয়।ষষ্ঠী থেকে দশমী। পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরের পুজো সব থেকে জনপ্রিয়। চন্দননগরের প্রতিমা দুই-তিন তলার সমান হয়।
জগতের ধাত্রী অর্থাৎ জগতের পালিকা দেবী জগদ্ধাত্রী। দেবী দুর্গার আর এক রূপ। দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী দশভুজা। দেবী জগদ্ধাত্রী সিংহবাহিনী চতুর্ভুজা। মহিষাসুর বধের পর দেবতারা অহঙ্কারী হয়ে ওঠেন।এবং দুর্গা যেহেতু তাঁদেরই সম্মিলিত শক্তির প্রকাশ, তাই তারা মনে করেন অসুর বধ হয়েছে তাঁদেরই যুগ্ম শক্তিতে। ব্রহ্মার বরের সম্মানরক্ষা করতে কেবল ওই নারীদেহটির প্রয়োজন ছিল। তাঁরা ভুলেই যান দেবী জগদ্ধাত্রীর শক্তিতেই তাঁরা শক্তিমান।
তা বুঝে দেবী অহং নাশের উদ্দেশ্যে একখণ্ড তৃণ রেখে অগ্নিকে বলেন দগ্ধ করতে এবং বায়ুকে বলেন তা স্থানচ্যুত করতে। অগ্নি এবং বায়ু ব্যর্থ হন। ইন্দ্র বজ্রদ্বারা সেই তৃণটি ধ্বংস করতে ব্যর্থ হলেন। দেবতাদের ভুল ভাঙে। এবং পরমাসুন্দরী চতুর্ভুজা রূপে প্রকোট হন দেবী । ভুল ভাঙার পর তাঁরা দেবী জগদ্ধাত্রীকে সকল শক্তির শ্রেষ্ঠ বলে গ্রহণ করেন। কার্তিক মাসের শুক্ল নবমীতে দেবী জগদ্ধাত্রী পূজিত হন।
মা জগদ্ধাত্রী মৃত হাতি র উপরে বসে আছেন।কিন্তু কেন মা মৃত হাতির উপরে বসে থাকেন? এই প্রশ্ন অনেকেরই ! জগদ্ধাত্রী দুর্গারই বিকল্প রূপ, মা দুর্গার সাথে যুদ্ধের সময় মহিষাসুর নানা মায়ারূপ ধরে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন দেবীকে। একবার সেই প্রচেষ্টায় মহিষাসুর ধারণ করেন হস্তীরূপ। সেই হস্তী দেবীকে বধের চেষ্টা করলে দুর্গা ধারণ করেন এক চতুর্ভুজা মূর্তি। চক্রদ্বারা তিনি ছেদন করেন হাতির মুণ্ড। সেই রূপটিই জগদ্ধাত্রী। সেই জন্যই ধ্যানমন্ত্রে কোথাও উল্লেখ না থাকলেও মূর্তিতত্ত্বে আমরা দেখছি, জগদ্ধাত্রী বাহন সিংহ এক হস্তীর মৃত শরীরের উপর দাঁড়িয়ে। কখনও বা সেই সিংহ খেলা করে হস্তীর কাটা মাথা নিয়ে। সংস্কৃতে হাতিটির নাম করী, সেই অনুসারে অসুরটির নাম করীন্দ্রাসুর। তাকে বধ করেন বলে জগদ্ধাত্রীর অপর নাম করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী।
মা জগদ্ধাত্রীর কথা জেনে কেমন লাগলো Comment box এ জানাবেন।