গোমেদ (Jacinth) স্বচ্ছ, উজ্জ্বল, লালচে বর্ণের পাথর। পাথরটিকে Onyx Stone এবং উর্দুতে গোমেদ বলা হয়। খাঁটি গোমেদ রত্নে জির্কোনিয়াম নামে এক প্রকার মহামূল্যবান ধাতু থাকে বলেই এর নাম হয়েছে ‘জ্যাসিন্থ’। বর্ণের দিক থেকে লালচে, হলদে আভাযুক্ত, বেগুনী, জলপাই রঙ- এর মত হয়ে থাকে। এর ভেতরের দিক সুক্ষ্ম বুদ বুদ এর মত দেখা যায়।
মূল গোমেদ পাথরের রঙ লালচে বাদামি অথবা হলুদাভ সবুজ। রাসায়নিক নাম “জারকোনিয়াম সিলিকেট”। কিন্তূ এর ভেতর প্রায়ই হাফানিয়াম, থোরিয়াম, ইউরেনিয়াম ইত্যাদি তেজস্ক্রিয় ধাতু মিশে থাকে। গোমেদকে কাটার সবচেয়ে বড় জায়গা ব্যাংকক। সেখানকার স্বচ্ছ গোমেদ দেখলে হীরা বলে ভ্রম হয়। হীরার সঙ্গে একে চট করে আলাদা করার উপায় হচ্ছে কোনও বইয়ের ওপর গোমেদটাকে রাখা। যদি এক একটা ছাপার অক্ষর দুটো করে মনে হয়, তাহলে পাথরটা নিশ্চয়ই গোমেদ, হীরা নয়। আলোর দ্বৈত প্রতিসরণের জন্য এই ঘটনা ঘটে।অজস্র নকল গোমেদ বাজারে বেরিয়েছে। এ ধরনের একটি হচ্ছে গার্নেট। এটি কম মূল্যের পাথর।
উপাদান (Chemical Composition) :
সিলিকন বা বালুকার সঙ্গে জির্কোনিয়াম নামক এক প্রকার দুস্প্রাপ্য ধাতু মিলিত হয়ে গোমেদ বা জ্যাসিন্থ সৃষ্টি হয়। গোমেদ (Mg, Mn, Fe)3Al2Si3O12 এবং Ca3(Cr, Al, Fe)2Si3O12 হচ্ছে Complex silicate,
কাঠিন্যতা (Hardness):
৬.৫ – ৭.৫
আপেক্ষিত গুরুত্ব (Specific Gravity):
৩.৫০-৪.৩০
প্রতিসরাঙ্ক (Refractive Index):
১.৭৩০-১.৭৬০
বিচ্ছুরণ (Dispersion):
০.০৩৯
প্রাপ্তিস্থান
আজপর্যন্ত বেশীর ভাগ গোমেদই পাওয়া গেছে সিংহলের রত্নপুরায়। তবে থাইল্যান্ডেও সম্প্রতি কিছু কিছু পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া নরওয়ে, অষ্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, চীন, ভারত, শ্রীলংকা প্রভৃতি স্থানে গোমেদ পাওয়া যায়।
বিভিন্ন প্রকার গোমেদ
Gomed Stone বিভিন্ন রকমের মধ্যে পাওয়া যায়। Ceylon Gomed Gemstone (সিলনি গোমেদ পাথর), আফ্রিকান গোমেদ পাথর, গয়া গোমেদ পাথর, কালো গোমেদ পাথর হয়ে থাকে। খাঁটি বা আসল গোমেদ কষ্টি পাথরে ঘষলে দাগ পড়ে না বা ক্ষয় হয় না।সিংহলী গোমেদ ও ইটালিয়ান গোমেদ স্বচ্ছ, ও উজ্জ্বল আভাযুক্ত।
শ্রীলংকান গোমেদ
শ্রীলংকান গোমেদ পাথরের রং খয়রি হয়ে থাকে, আবার লাইট খয়রি হয়ে থাকে, তবে বর্ণের দিক থেকে লালচে, হলদে আভাযুক্ত, বেগুনী, জলপাই রঙ- এর মত দেখতে যে পাথর গুলো এগুলো (আসল পাথর – Real Gemstone) গোমেদ রত্ন পাথর।
সিলোনি গোমেদ
সিলোনি গোমেদের ভেতরের দিক সুক্ষ্ম বুদ বুদ দানার মত দেখা যাবে। লালচে আভাযুক্ত স্বচ্ছ উজ্জ্বল কালারের মত এবং শরিষার তেল এর মত দেখতে হবে, এমন দেখতে যে পাথর গুলো এগুলো আসল গোমেদ পাথর। সিলনী পাথর ভালো কোয়ালিটির গোমেদ পাথর গুলো কিন্তু অনেক পরিষ্কার এবং ট্রান্সপারেন্ট হয়ে থাকে।
আফ্রিকান গোমেদ
আফ্রিকান গোমেদ রত্ন পাথরের ভিতর কিন্তু সুক্ষ্ম বুদ বুদ দানা অথবা ফাইবার থাকে না, তাই এক্ষেত্রে আপনাকে একটু সচেতন থাকতে হবে এবং বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নিয়ে পাথরটি নির্বাচন করতে হবে।
ভারতীয় গয়া গোমেদ
ভারতীয় গয়া গোমেদ কালচে রঙ- এর হয়ে থাকে। আলোতে কিছুটা স্বচ্ছ ও লালচে দেখায়।
প্রচলিত বিশ্বাস
প্রচলিত আছে গোমেদ রাহু গ্রহের রত্ন। রাহু গ্রহের খারাপ প্রভাব এড়াতে জ্যোতিষীরা গোমেদ রত্ন পরার পরামর্শ দেন। এই পাথরটি পরিধান করলে অচল কাজ সম্পন্ন হয় এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত হয়। গোমেদ রত্ন পরিধান করলে ব্লাড ক্যান্সার, চোখ ও জয়েন্টের ব্যথার মতো সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যায়।
হস্তরেখা বিজ্ঞানে এবং রাশিচক্রে রাহুর রুক্ষ দৃষ্টি হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য ও রাহুর অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য গোমেদ রত্ন ধারণ করা হয়। রত্নটি ব্যবহারে মামলা-মোকদ্দমা, হঠাৎ বিপদ, ঋণ ইত্যাদি বিষয়ে রক্ষা পাওয়া যায়। জাতক/জাতিকার কন্যারাশিতে, বৃশ্চিক লগ্নে বা জন্মরাশি হলে পরাশর পন্ডিতের মতে গোমেদ রত্ন ধারণ করা উচিত। অনেক পন্ডিত ও মুনি-ঋষির মতে গোমেদ ধারণে হঠাৎ কোন বিপদ বা দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে ও অমঙ্গলকে দূরীভূত করে।
সম্পাদকের কথা
মানুষের বিশ্বাসে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, সম্পূর্ণ তথ্য দেওয়াটাই আমাদের উদ্দেশ্য, বিচার-বিবেচনা ও সিদ্ধান্ত আপনার। জ্যোতিষ কতটা সত্যি, কতটা মিথ্যে এইসব ই আপনার বিচার বুদ্ধির উপরে নির্ভর করে।