একদিন পুজোয় বসে রাণী মা স্বয়ং রঘুবীরের আদেশ পান। রঘুবীর তাঁকে জানান যে তিনি রথে আহরণ করতে চান। তাঁকে যেন রথে আহরণ করিয়ে ভ্রমণ করানো হয়। রঘুবীরের এই আদেশ পাওয়ার পর রাণী মা সিদ্ধান্ত নেন তিনি ঐ বছর রথ বার করবেন। সেই অনুযায়ী তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
রাণী মা খুব ঘটা করে পুজো উৎসবাদি করতেন। শহরের মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে যেত। রাণীর কথা ছিল, যা হবে কখনো ছোট খাটো হবে না। সকলকে নিয়েই উৎসব। আর উৎসব উপলক্ষে যতটা পারা যায় মানুষের সেবা করার প্রবণতা। আমি এক রাণী সদাই তোমাদের পাশে আছি।
একদিন রাণী মা তার প্রিয় জামাতা মথুরামোহন কে ডেকে বলেন, মথুর, আমার ইচ্ছে হয়েছে রুপোর রথে আহরণ করিয়ে রঘুবীর কে কলকাতার রাজপথে ভ্রমণ করাবো, “চকচকে রুপোর রথ”। মথুরামোহন বললেন, ঠিক আছে আমি আজই বিখ্যাত সাহেব হ্যামিলটন কোম্পানিতে বায়না দিয়ে দিচ্ছি”। রাণী মা মৃদু হেসে মিষ্টি গলায় বললেন, দেশি কারিগর থাকতে বিদেশি কারিগরের কাছে যাবে কেন ?
মথুরা মোহন কলকাতার উদয়মাণ বড়লোক ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত। তিনি রাণী মার কথায় একটু চমকে গেলেন। বললেন, বেশ তাই হোক দেশি কারিগর ডাকা হোক। ঠিক সময়ে রথ প্রস্তুত হয়ে গেল। প্রভূত আড়ম্বরে স্নানযাত্রার পূণ্য দিনে রথ প্রতিষ্ঠা করা হলো। রথ তৈরি করতে সেইসময়ে খরচ হয়েছিল এক লক্ষ বাইশ হাজার একশো পণেরো টাকা।
রথের দিন রাণীমা সুসজ্জিত রথ সাজিয়ে তাতে তাঁর ইষ্ট দেব রঘুবীর কে চাপিয়ে এক বিশাল শোভাযাত্রা আয়োজন করেন। তার জামাইরা খালি পায়ে রথ এর আগে চলছেন। রাণীর নাতি-নাতনিরা বিভিন্ন রকমের গাড়ি চড়ে রথের পেছনে, এরপর বিরাট শোভাযাত্রা। গোটা কলকাতার মানুষ একটা সমরোহ দেখলে বটে।
রাণী রাসমণি প্রচলিত সেই রথ উৎসব আজো পালিত হয়ে আসছে মহাসমারোহে দক্ষিণেশ্বরে। সেই প্রাচীন রুপোর রথ তাতে অধিষ্ঠান করেন জগন্নাথ। তারপর গোটা দক্ষিণেশ্বর ভ্রমণ করেন।
সংগৃহিত
রানী রাসমণির রুপোর রথের কথা কেমন লাগলো অবশ্যই Comment box এ আমাদের জানাবেন।