শিবের প্রিয় বেলপাতার উৎপত্তি সম্পর্কে স্কন্দপুরাণে একটি কাহিনি প্রচলিত আছে। পুরাণ অনুযায়ী একদা দেবী পার্বতী নিজের ললাট থেকে ঘাম মুছে ফেলেন, তাঁর কয়েক ফোঁটা ঘাম মন্দার পর্বতে গিয়ে পড়ে। সেখান থেকে বেল বৃক্ষের উৎপত্তি। এই গাছের শিকড়ে গিরিজা, গুড়িতে মহেশ্বরী, শাখায় দক্ষয়ায়নী, পাতায় পার্বতী ও ফুলে গৌরীর বাস মনে করা হয়।বেলগাছ ত্রিগুণের অধিকারী যথা— স্বতঃ, রজ, তম।
বেলপাতা কখনও বাসী বা অশুদ্ধ হয় না। এক বার ব্যবহারের পর ধুয়ে দ্বিতীয় বার ব্যবহারের জন্য স্কন্দ পুরাণে একটি শ্লোকের উল্লেখ রয়েছে । ৬ মাস পর্যন্ত বেলপাতা বাসি হয় না। শিবলিঙ্গে অর্পণ করার পর, তা ধুয়ে পুনরায় অর্পণ করা যায়। কোথাও বেলপাতা পাওয়া না-গেলে এর চূর্ণ অর্পণ করার বিধান রয়েছে।
সোমবার গাছ থেকে বেলপাতা তুলবেন না। বেলপাতা শিবের বাস মনে করা হয়। এ ছাড়াও প্রতিদিন দুপুরের পরও বেলপাতা তুলতে নেই।
বেলপাতা অর্পণের নিয়ম
বেলপাতায় চন্দন বা অষ্টগন্ধ দিয়ে ওম, শিব পঞ্চাক্ষরী মন্ত্র বা শিব নাম লিখে অর্পণ করলে ব্যক্তির সমস্ত দুর্লভ মনোস্কামনার পূর্তি হয়। কালিকা পুরাণ অনুযায়ী অর্পিত বেলপাতাকে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনী থেকে ধরে নামানো উচিত। আবার অর্পণের সময় ডান হাতের অনামিকা ও বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের প্রয়োগ করা উচিত। তিন জন্মের পাপস্খলন করে এই বেলপাতা। শিবের প্রিয় তিন পাতাযুক্ত বেলপাতা সত্ব, রজ ও তম গুণের প্রতীক। নিম্নলিখিত মন্ত্র উচ্চারণ করে বেলপাতা অর্পণ করা উচিত—
‘ত্রিদলং ত্রিগুণাকরং ত্রিনেত্র ব ত্রিধাযুতম।
ত্রিজন্ম পাপ সংহারং একবিল্বম শিবার্পণম্য।।’
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-
প্রথমে পাঁচটা জ্যোতির্লিঙ্গ ছিল। সেগুলি সবই তেজস্ক্রিয়। অর্থাৎ সেগুলিকে শিবলিঙ্গ মেনে পুজো করতে গিয়ে যে কেউ কিছুদিনের মধ্যে ক্যান্সারে মারা যেত । বলে রাখা ভালো জ্যোতির্লিঙ্গ গুলোর আকার বর্তমান শিবলিঙ্গ গুলোর মতই ছিল, তবে এখন বর্তমানে চারটি জ্যোতির্লিঙ্গ রয়েছে। একটি জ্যোতির্লিঙ্গ কোনভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
এখন আমরা সকলে জানি শিবলিঙ্গ কে পুজো করা হয় ঠান্ডা জল এবং বেলপাতা সমন্বয়ে। যাদের তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে ধারণা আছে তারা জানবেন ঠান্ডা জল মডারেটর হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ তীব্র গতি সম্পন্ন নিউট্রনকে মন্থরগতি সম্পন্ন করে।
এবারে একটা রিসার্চের কথা বলি।
এখানে দেখা গেছে বেলপাতা রেডিও প্রটেক্টিভ। অর্থাৎ তেজস্ক্রিয়তা থেকে নিজেকে বেশ কিছুটা বাঁচাতে পারে।
অর্থাৎ আমরা যদি ঠান্ডা জল দিয়ে নিউট্রন কে মন্থর গতি সম্পন্ন করতে পারি এবং বেলপাতা দিয়ে জ্যোতির্লিঙ্গ কে মুড়ে ফেলতে পারি তাহলে আমাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা (তেজস্ক্রিয়তার কারণে) অনেকখানি কমে যায়।এই কারণেই বেলপাতা এবং জলের সমন্বয়ে শিবলিঙ্গের পুজো করা হয় এবং সেই রেওয়াজ এখনো কালক্রমে চলে আসছে।
বেল পাতা অর্পণের মন্ত্র-
নমো বিল্ল্মিনে চ কবচিনে চ নমো বর্ম্মিণে চ বরূথিনে চ
নমঃ শ্রুতায় চ শ্রুতসেনায় চ নমো দুন্দুষ্ভ্যায় চা হনন্ন্যায় চ নমো ঘৃশ্ণবে।।
দর্শনং বিল্বপত্রস্য স্পর্শনম্ পাপনাশনম্। অঘোর পাপ সংহারং বিল্ব পত্রং শিবার্পণম্।।
ত্রিদলং ত্রিগুণাকারং ত্রিনেত্রং চ ত্রিধায়ুধম্। ত্রিজন্মাপাপসংহারং বিল্বপত্রং শিবার্পণম্।।
গৃহাণ বিল্ব পত্রাণি সপুষ্পাণি মহেশ্বর। সুগন্ধীনি ভবানীশ শিবত্বংকুসুম প্রিয়।
আমাদের লেখা কেমন লাগলো অবশ্যই Comment box এ জানাবেন। ধণ্যবাদ