অনেক বছর আগের কাহিনী থেকে জানা যায় । যখন একটি গ্রামে এক শিকারী বসবাস করতেন। একদিন সে স্বীকার করতে জঙ্গলে যাচ্ছিল তখনই রাস্তায় এক মন্দির দেখতে পেলেন। যাঁর দর্শন পাওয়ার পর সেই শিকারির মন ভক্তিতে ভরে গিয়েছিল। তাই তিনি ভগবান মহাদেবকে কিছু অর্পণ করতে চাইলেন, যদিও সেই শিকারের পূজা-অর্চনা সম্পর্কে কোন জ্ঞান ছিল না। আর সেই জন্য তিনি তাঁর কাছে উপস্থিত থাকা মাংসের টুকরো ভগবান মহাদেবকে অর্পণ করেন। এরপরই ওই শিকারি সেই মন্দির থেকে ফিরে আসেন এই ভেবে যে তাঁর দেওয়া অর্পণ মহাদেব স্বীকার করবেন।
এই মন্দিরটি দেখাশোনা করত এক নম্বর যেহেতু সেই ব্রাহ্মণের বাড়ি অনেকটাই দূরে ছিল তাই তাঁর পক্ষের নিত্য প্রতিদিন এসে মন্দিরের পুজো করা সম্ভব ছিল না। তাই বেশ কয়েক দিন অন্তর অন্তর মন্দিরে এসে শিবলিঙ্গের পুজো করতেন ওই ব্রাহ্মণ। অর্পণ করা মাংস টুকরো দেখে ব্রাহ্মণ চমকে যায়, এবং সে ভাবে যে এটি হয়তো কোন বন্যপ্রাণীর কাজ। তারপরই সেই ব্রাহ্মণ শিবলিঙ্গটিকে শুদ্ধ করে পুজো করে সেই জায়গাটি থেকে চলে যায়।
এরপরে আবার সেই শিকারি আরো বেশি পরিমাণে মাংস নিয়ে এসে শিবলিঙ্গের ওপর অর্পণ করতে চান। যেহেতু সে পূজা পাঠ সম্পর্কে কিছুই জানতো না তাই শিবলিঙ্গের সামনে বসেই নিজের মনের কথা বলতেন সেই শিকারি। একদিন হঠাৎই তাঁর মনে ইচ্ছে জাগলো যে মন্দিরটিকে পরিষ্কার করবেন তিনি, কিন্তু মন্দির পরিষ্কার করার জন্য তাঁর কাছে জল রাখার কোনো পাত্র ছিল না। তখন তিনি পাশের একটি ঝর্ণা থেকে নিজের মুখে করে জল নিয়ে এসে শিব লিঙ্গের উপরে অর্পণ করেন।
এরপর আবারো কিছু দিন পরে ব্রাহ্মণ এসে দেখে শিব লিঙ্গের উপরে অর্পণ করা রয়েছে মাংস, একইসাথে তাঁর উপরে রয়েছে থুতু। যা দেখা মাত্রই প্রচন্ড পরিমাণ ক্ষিপ্ত হন ব্রাহ্মণ। এরপর তিনি বুঝতে পারেন; এই কাজ কোন বন্যপ্রাণীর নয় বরং কোন মানুষের। তারপর আবারও সে মন্দিরটিকে শুদ্ধ করে শিবলিঙ্গের পূজা করে সেই স্থান থেকে চলে যান। কিন্তু তিনি প্রতিবারই যখন মন্দিরে আসছে দেখতেন শিবলিঙ্গটি অপবিত্র হয়ে পড়ে রয়েছে।
তাই একদিন ব্রাহ্মণ কাঁদতে কাঁদতে প্রশ্ন করলেন, “হে দেবাদিদেব মহাদেব! আপনি কেন এই অপমান প্রত্যেকদিন সহ্য করছেন?”
এরপরই শিবলিঙ্গ থেকে একটি আওয়াজ আসে, যেখান থেকে দেবাদিদেব মহাদেব বলেন , যাকে তুমি অপমান মনে করছ সে আমারই এক ভক্তের দেওয়া অর্পণ! আমি যে তাঁর ভক্তির সাথে ব্যাধিত হয়ে গেছি, তাই সে যা অর্পণ করে আমি খুশি মনে তা গ্রহণ করি। যদি তুমি সত্যিই তাঁর ভক্তের রূপ দেখতে চাও তাহলে পাশে গিয়ে অপেক্ষা করো, যাও সে এক্ষুনি আসবে।এরপরই সেই ব্রাহ্মণ একটি ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়েন।
সেখানে উপস্থিত হয় সেই শিকারি প্রতিবারের মত এবারেও অর্পণের জন্য ছিল মাংস এবং জল। কিন্তু মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন এবারে তাঁর দেওয়া অর্পণ শিব গ্রহণ করেননি। এরপরই সে লক্ষ্য করলো শিবলিঙ্গের ডান চোখ থেকে কিছু একটা বার হচ্ছে, তখন সে সেইখানে জরিবুটি লাগালো। তখন সেই শিকারি দেখে চোখ দিয়ে রক্তপাত হওয়া শুরু করল। সেই মুহূর্তেই শিকারি সিদ্ধান্ত নেয় যে তাঁর ডান চোখে ভগবানকে অর্পণ করবেন।এরপর সে নিজের ছুরি বার করে নিজের ডান চোখ কেটে শিবলিঙ্গের ডান চোখটিতে স্থাপন করে দেয়।তারপরই সেখান থেকে রক্তপাত হওয়া বন্ধ হতে লাগলো। কিন্তু এর পরিবর্তে তাঁর চোখ থেকে ক্রমাগত রক্তপাত হতে শুরু করল।এবার সে দেখে শিবলিঙ্গের বাঁ চোখ থেকে রক্তপাত হচ্ছে।তারপরই যখন সে সিদ্ধান্ত নেয় যে এবার নিজের বাঁ চোখটি অর্পণ করবেন, তখনই হঠাৎ সে থেমে যায়।তখন সেভাবে যদি সে নিজের বাঁ চোখ অর্পণ করে দেয় তাহলে কীভাবে সেই ক্ষত স্থান দেখবে! তখন সে নিজের ডান পা সেই ক্ষতস্থানটিতে রেখে নিজের বাঁ চোখ কেটে ফেলে।শিকারির ভক্তি ও শ্রদ্ধা দেখে ব্রাহ্মণ চমকে উঠলেন। এরপরই সেই স্থানে প্রকট হন দেবাদিদেব মহাদেব। এবং ভগবান মহাদেব ওই শিকারির দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন।এরপরই সেই শিকারি ভগবানের চরণে নিজেকে সমর্পন করলেন। তারপর থেকেই তাঁকে কান্নাপা নয়ানমার নামে পরিচিতি পায়।কান্নাপা অর্থাৎ যে চোখ দান করে এবং নয়ানমার যার অর্থ হল শিবের ভক্ত।যে সমস্ত ভক্তরা ভক্তি ভরে ভগবানের পুজো করেন সেই ভক্তদের কোন ক্ষতি হতে দেন না ভগবান।
ভক্ত আর ভগবানের সম্পর্ক টা সম্পূর্ণ আলাদা। ভগবান র পুজোর জন্য আমিষ , নিরামিষ , উপবাসের কোনো মাহাত্ম্য নেই। শুধু আছে স্বার্থহীন ভালোবাসা আর মনের ভক্তি। তাই ভক্তদের ডাকে বরং বার ভগবান সারা দেন।
সংগৃহিত
আমাদের কাহিনী কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন Comment Box এ ধন্যবাদ।