পূর্ণিমা হল একটি বৈদিক প্রথা, যার মধ্য দিয়ে শিষ্য তাঁর গুরুকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে থাকেন। আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় গুরু পূর্ণিমা। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে গুরু পূর্ণিমার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই তিথিতেই মুণি পরাশর ও মাতা সত্যবতীর ঘরে মহাভারতের রচয়িতা মহর্ষি বেদব্যাস জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাই এই দিনে মহর্ষি বেদব্যাসের জন্ম জয়ন্তীও পালন করা হয়। মনে করা হয়, তিনিই চারটি বেদের ব্যাখ্যা করেছেন। বেদ বিভাজনের শ্রেয় তাঁকেই দেওয়া হয়েছে। তাই তাঁর নাম বেদব্যাস। ১৮টি পুরাণ ছাড়াও তিনি রচনা করেন মহাভারত ও শ্রীমদ্ভগবত। এই কারণে গুরু পূর্ণিমাকে ব্যাস পূর্ণিমাও বলা হয়।বৌদ্ধ ধর্ম মতে, বোধিজ্ঞান লাভের পরে আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় সারনাথে প্রথম উপদেশ দেন গৌতম বুদ্ধ। হিন্দু পুরাণ মতে, ভগবান শিব বা মহাদেব হলেন আদি গুরু। সপ্তর্ষির সাতজন ঋষি হল তাঁর প্রথম শিষ্য – অত্রি, বশিষ্ঠ, পুলহ, অঙ্গীরা, পুলস্থ্য, মরীচি এবং কেতু ।নাম যতটা জানা যায়।শিব এই তিথিতে আদিগুরুতে রূপান্তরিত হন এবং এই সাত ঋষিকে মহাজ্ঞান প্রদান করেন। তাই এই তিথি হল গুরু পূর্ণিমা।
আষাঢ় মাসের পূর্ণিমাতেই গুরুপূর্ণিমা পালন করা হয়। আজকের দিনে গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়ে থাকে। আজকের দিনটিকে সর্বতভাবে একটি শুভ দিন বলে মনে করা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি বৌদ্ধরাও এই দিনটিকে মহা সাড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপন করেন।
গুরুপূর্ণিমাকে ব্যাস পূর্ণিমাও বলা হয়ে থাকে। কারণ মনে করা আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতেই নাকি জন্ম নিয়েছিলেন ব্যাসদেব। তাই অনেকেকের কাছে ব্যসদেব-এর জন্মতিথি হিসসাবেও গুরুপূর্ণিমা পালন করা হয়। তবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, এই গুরুপূর্ণিমার বিশেষ তিথিতেই গৌতম বুদ্ধ ধর্ম নিয়ে উপদেশটি দিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত এই গুরু শব্দেরও কিন্তু একটা অন্তর্নিহিত অর্থ রয়েছে। ‘গু’-কথার অর্থ অন্ধকার এবং ‘রু’ কথার অর্থ অন্ধকার দূরীভুত করা। আর সেই কারণেই একজন মানুষের জীবনে গুরুর অবদান সবথেকে বেশি। বলা হয় একজন গুরুই পারেন তাঁর শিষ্যের জীবন থেকে যাবতীয় অন্ধকার দূর করে দিতে পারেন। নেপালে আজকের দিনটি বিশেষ আঢ়ম্বরে পালিত হয়ে থাকে কারণ নেপালে আজকের দিনটি শিক্ষক দিবস হিসাবে পালিত হয়। এই দিন সেখানে সকলে তাঁদের গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
শিব এই তিথিতেই প্রথম জ্ঞান প্রদান করেছিলেন। আর সেখান থেকেই গুরু প্রথাল সৃষ্টি হয়ে। ভগবান শিবকেও তাই আদি গুরু হিসাবে মনে করা হয়। গুরুর বচনকে পাথেয় করেই জীবনে এগিয়ে চলাই সকলের জীবনের মূল লক্ষ্য। তাই শাস্ত্রেও আজকের দিনটির বিশেষ মাহাত্ম্য অনেক বেশি।হিন্দু বিশ্বাস মতে, এই তিথিতে মুণি পরাশর ও মাতা সত্যবতীর ঘরে মহাভারতের রচয়িতা মহর্ষি বেদব্যাস জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর এই দিনটিকে বিশেষ মর্যাদা দিতেই ব্যাস পূর্ণিমাও বলা হয়।