পণপ্রথা নিষিদ্ধকরণ
বিবাহের সময় উভয় পক্ষের এক পক্ষ অর্থাৎ বরপক্ষ বা কনেপক্ষ বা তার বাবা বা মা অথবা সংশ্লিষ্ট অন্য কেউ যদি অন্য পক্ষ অথবা তার বাবা-মা অথবা সশ্লিষ্ট অন্য কোনও ব্যক্তিকে বিয়ে করার শর্ত হিসেবে বিয়ের আগে বা পরে অথবা অনুষ্ঠানের দিন সোজাসুজি বা ঘুরপথে কোনও সম্পত্তি অথবা মূল্যবান জিনিস নগদ টাকা, সোনাদানা, আসবাব পত্র দিতে বা দেওয়ার জন্য রাজি থাকেন, তখন তাকে পণ বলা যাবে।
তবে, যাঁরা মুসলিম ব্যক্তিগত আইন বা শরিয়তি আইন অনুযায়ী চলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ‘মেহের’ পণের আওতায় আসবে না।
পণ দেওয়া নেওয়ার শাস্তি
পণ দেওয়া বা নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত উভয় পক্ষেরই শাস্তির বিধান আছে। এই কাজে সরাসরি যুক্ত থাকা বা লেনদেনে সাহায্য করার জন্য কমপক্ষে ৫ বছর জেল এবং জরিমানা আবার কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা অথবা পণের মূল্য, দুইয়ের মধ্যে যেটি বেশি, সেই সাজা হবে।
কিন্তু কোনও রকম জোরজবরদস্তি ছাড়া যদি বর/কনেকে উপহার দেওয়া হয় তবে তা হলে কোনও অপরাধের ঘটনা ঘটে না। তবে সব উপহারের লিখিত তালিকা অবশ্যই রাখতে হবে। প্রচলিত রীতি বা আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী উপহার দিলে বা নিলে কোনও শাস্তির বিধান নেই।
দাবি করার শাস্তি
সোজাসুজি বা ঘুরপথে পণের দাবি করলে সাজা অন্তত ৬ মাস থেকে দু’ বছরের জেল এবং ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। গণমাধ্যমে যদি ছেলে/মেয়ে বা অন্য কোনও আত্মীয়ের বিবাহের জন্য পণ চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় তা হলে ছাপাখানা, প্রচারক, প্রকাশকের সাজা হবে ৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত জেল অথবা ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা। তবে শাস্তির চেয়েও বেশি কার্যকর হল সচেতনতা বৃদ্ধির কথা। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি সামাজিক ও গোষ্ঠী সংগঠন পণপ্রথার বিরুদ্ধে সচেতনতার কার্যক্রম চালাচ্ছে।
বিয়ের অল্প কিছু দিনের অথবা ৭ বছরের মধ্যে বধূ আত্মহত্যকরলে অথবা তার অস্বাভাবিক মৃত্য হলে যদি প্রমাণিত হয় যে মৃতার স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়-স্বজনের দুর্ব্যবহার, শারীরিক নির্যাতন তাকে আত্মহত্যয় প্ররোচনা জুগিয়েছে বা তারা হত্যা করেছে তা হলে ধরে নেওয়া যেতে পারে এর মূলে পণ আদায়ের অভিসন্ধি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অপরাধ যে এলাকায় হয়েছে সেখানকার থানায় অভিযোগ দায়ের করতে হবে।
অনেক সময় দেখা যায় পণ নেওয়ার পরও মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে নিগৃহিতা হন। তাঁদের স্ত্রী ধন কেড়ে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের নিজস্ব গহনাপত্র শ্বশুরবাড়ির লোকজন কেড়ে নেয়। এই পরিস্থিতিতে আইনি সাহায্য নেওয়ার আগে সর্বাগ্রে মাথায় রাখতে হবে স্ত্রী ধনের উপর শ্বশুরবাড়ির কোনও অধিকার নেই।
পণ জনিত মৃত্যু হলে শুধু জিডি বা জেনারেল ডায়েরি করলে হবে না রীতিমতো ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট বা এফআইআর দাখিল করতে হবে। সেই এফআইআরের মাধ্যমে পুলিশ মামলা শুরু করতে বাধ্য। দায়রা আদালতে অথবা প্রথম শ্রেণির ম্যজিস্ট্রেটের এজলাসে এই মালার বিচার হবে। এই অপরাধের বিচার হবে জামিন অযোগ্য ধারায়। শাস্তিও জামিন অযোগ্য। কমপক্ষে ৭ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সুযোগ আইনে রয়ে গিয়েছে। আর সেই সঙ্গে পণ দেওয়া নেওয়ার ব্যপারে কোনও চুক্তি স্বাক্ষরিত থাকলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।
বিয়ের এক বছর আগেও কোনও রকম পণ দেওয়া হলে, তা স্ত্রীরই প্রাপ্য। আবার বিয়ের সময় বা এক বছর পরে দেওয়া হলেও একই নিয়ম। নাবালিকা বধুর ১৮ বছর বয়স হলে, যৌতুক হিসেবে পাওয়া সমস্ত সামগ্রী তাকে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, পণের টাকা বা সামগ্রী স্ত্রী-ধন হিসাবে বধূ বা তার উত্তরাধিকারীরই প্রাপ্য।
সংগৃহিত