ক্ষীরগ্রামের মা যোগাদ্যা পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট ব্লক এর ক্ষীরগ্রামের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন মা যোগাদ্যা। বাংলার অন্যতম একটি সতীপীঠ হলো এই ক্ষীরগ্রাম।
এখানে দেবী সতীর ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি পতিত হয়েছে। দেবী, রূপে মহিষাসুরমর্দিনী। দেবীর ২টি মূর্তি কষ্টি পাথরের তৈরী। দেবীর ইতিহাস সম্পর্কে অনেক পোস্টে অনেক তথ্য আগেই প্রচারিত হয়েছে ইতিপূর্বে। তাই আমি পুনরায় সেই সব লিখে চর্বিত চর্বণ করব না। আমি মূলত যেটা এই পোস্টে বলছি, সেটা হল দর্শনার্থীরা ক্ষীরগ্রামে পৌঁছে দেবীর ৪ টি মন্দির দেখে এর কারণ বুঝতে পারেন না। সেগুল নিয়েই আজ কথা বলব।
গ্রামে পৌঁছে মোট ৪ টি মন্দির দেখতে পাবেনঃ ১) নতুন মন্দির
২)জল মন্দির
৩)বিরাম মন্দির
৪)মায়ের বাড়ি মা যোগাদ্যার বর্তমানে ২ টি মূর্তি আছেন। তাঁদের মধ্যে একটি মূর্তি ক্ষীরদিঘির জলে নিমজ্জিত থাকে। বৈশাখী সংক্রান্তির সময় মায়ের আবির্ভাব দিবস। এছাড়া বিশেষ বিশেষ পুজোর সময় মাকে জল থেকে তুলে এনে চলে পুজো। পূজান্তে দেবীকে পুনরায় জল মন্দিরে নিমজ্জিত করে রাখা হয়, বিধর্মীদের আক্রমনের ভয়েই মূলত এই ব্যবস্থা। কিন্তু ক্ষীরগ্রামের পূজিতা প্রাচীন যোগাদ্যা মূর্তিটি আনুমানিক ৬০০ বছরের প্রাচীন। সেই বিগ্রহ যখন জলে নিমজ্জিত রাখা হতো তখন কোন জল মন্দির ছিল না, ফলে সেই বিগ্রহ ক্ষীর দিঘির জলে হারিয়ে গিয়েছিল। ফলে গ্রামবাসীরা দুঃখিত হয়ে নতুন বিগ্রহ নির্মাণের ইচ্ছা নিয়ে আনুমানিক ২০০ বছর আগে, বর্ধমান মহারাজ কীর্তিচন্দ্রের কাছে দরবার করেন। তাঁর নির্দেশে দাঁইহাটের নবীন ভাস্কর নতুন যোগাদ্যা মূর্তিটি তৈরি করেন। এই নবীন ভাস্করই হলেন তিনিই, যিনি পরবর্তীতে দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের মা ভবতারিণীর মূর্তি নির্মাণ করেন। এই ভাবেই দ্বিতীয় বিগ্রহেই দেবীর পূজা চলছিল, বছরের বিশেষ তিথিতে জল থেকে তুলে এনে। কিন্তু বহু বছর বাদে দিঘি সংস্কার করার প্রয়োজন পড়ে। সেই সময় পুরোনো মূর্তিটি পাওয়া যায়। ফলে দুটি বিগ্রহের পূজা হওয়া দরকার। এই ভেবে বর্তমানে, পুরোনো মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি ্জল মন্দিরের পাশেই আরেকটি নতুন লাল গ্রানাইট পাথরে মন্দির গড়ে নিত্য পুজিতা হতে থাকেন।
এই বিগ্রহ সারা বছরই দর্শন করতে পারা যায়। এই মন্দিরে নিত্য অন্ন ভোগ প্রসাদ পেতে পারেন। ফোন নম্বরঃ 9735832923 & 6295371204। এখানে যোগাযোগ করতে পারেন অগ্রিম অথবা সকাল ১০ টার মধ্যে। সম্পূর্ণ নিরামিষ প্রসাদ মুল্য ৫০ টাকা । এখানে যোগাযোগ করতে পারেন রাত্রে গেস্ট হাউসে থাকবার জন্যও।এখানে বয়স্ক দের কথা মাথায় রেখেই টেবিল চেয়ারে বসে প্রসাদ পাবার ব্যবস্থা। এবার আসি বিরাম মন্দিরে। সারা বছর ফাঁকা থাকলেও বিশেষ তিথিতে জল মন্দির থেকে দ্বিতীয় বিগ্রহ উত্তোলন পূর্বক এখানে এনে দেবীকে পূজা করা হয়ে থাকে। কেবল তখনি এই মন্দিরে দেবীর দর্শন হয়।
সব শেষে বলব মায়ের বাড়ির কথা। এই মন্দির গ্রামের ভিতরে একটি টিলার মতো উচ্চ স্থানে অবস্থিত। আট দশটি সিঁড়ি বেয়ে উঠলে এক সমতল ভূমি তার মধ্যথলে শ্বেত শুভ্র মন্দির। মন্দিরটি পাল যুগের স্থপত্য শৈলীতে গঠিত। এই মন্দিরই প্রাচীনতম মন্দির। এর গর্ভ মন্দিরে একটি বেদি রয়েছে। সিন্দুর লিপ্ত বেদিতে একটি ছোট গহ্বর রয়েছে। কথিত এই গহ্বর পাতালের মুখ। এখান থেকেই মহাবীর হনুমান জী শ্রী রাম লক্ষ্মণ সহ দেবী ভদ্রকালীকে নিয়ে ভূপৃষ্ঠে নিয়ে এসে স্থাপন করেছিলেন। সতী পীঠ এর কিছু লক্ষণ আছে সেই সমস্ত লক্ষণের অন্তর্গত একটি হচ্ছে কূর্ম পৃষ্ঠাকৃতি ভূমিতে দেবীর অবস্থান হওয়ার কথা, সন্নিকটে শ্মশান, উত্তর বাহিনী নদী বা পবিত্র জলাধার, শিবা সম্প্রদায়ের বাস এবং অবশ্যই ভৈরবের অবস্থান হতে হবে। এই সমস্ত লক্ষণের বেশ কয়েকটি মিলে যায় বর্তমানে। মায়ের বাড়িতে দেবী ঘটে পূজিত হন।
এখানেও ভক্তেরা প্রসাদ পেতে পারেন। ফোনঃ 6296096231 & 8172018176 এই দুই নম্বরে। এখানে দেবীকে আমিষ ভোগ নিবেদন করা হয়ে থাকে মুল্য ৬০ টাকা। এখানে বয়স্ক দের কথা মাথায় রেখেই টেবিল চেয়ারে বসে প্রসাদ পাবার ব্যবস্থা। জল কল এবং বাথরুমের ব্যবস্থাও আছে। এই মন্দিরের অদূরেই অবস্থান করছেন ভৈরব ক্ষীরকণ্টক। প্রায় দুইতলা বাড়ির সমান উঁচু স্থানে ভৈরব অবস্থান করছেন। ভক্তদের সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠে দর্শন করতে হবে। আশা করি এই উপরোক্ত ৪ টি মন্দিরের বিশয়ে আলোচনা পড়ে দেখলেই ভক্তদের নিকট সমস্ত কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। জয় মা যোগাদ্যা মাতার জয়।
দূরভাষঃ কলকাতা থেকে যাবার পথ দুটি,১) শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে কাটোয়া। তার পরে বাসে 25 km দূরত্ব কৈচর বাস রাস্তার মোড়। সেখানে নেমে একটি টোটো ধরে মন্দির পৌঁছতে মিনিট 10 শেক সময় লাগবে। ২) হাওড়া থেকে বর্ধমান পৌঁছে, পুনরায় বর্ধমান থেকে কাটোয়া গামী ট্রেন ধরতে পারেন তাহলে কৈচর স্টেশনে নেমে একটি টোটো ধরে মন্দির পৌঁছতে মিনিট ৮ টেক সময় লাগবে। কিন্তু কৈচরের ট্রেন খুব কম।যদি সেই ট্রেন ধরতে না পারেন তাহলে বর্ধমান স্টেশন থেকে টোটো করে নবাবহাট বাস স্ট্যান্ড যেতে হবে। তার পরে সেখান থেকে বাসে 45 km দূরত্ব। পথ অতিক্রম করতে লাগে পৌনে 2 ঘন্টা।
Source – Facebook
সংগহীতি

