উত্তর কলকাতার সুকিয়া স্ট্রিটে মা শ্যামসুন্দরীর মন্দির।কালী এখানে পূজিতা ছোট্ট মেয়ে রূপে। তাই অম্ববাচি পালিত হয় না এই মন্দিরে। বলির কোনও রীতি নেই। পুরোপুরি নিষিদ্ধ মাছ, মাংস। ভক্তদের বিশ্বাস, কাউকে কক্ষণও খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না শ্যামসুন্দরী। ভক্তে কাতর প্রার্থনায় ঠিক সাড়া দেন তিনি, পূরণ করেন মনবাঞ্ছা।
মন্দিরের বেদীতে আছেন মা শ্যামসুন্দরী। তাঁর গা ঘেঁসেই বসে রয়েছেন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা। তাঁরা দেবীর সন্তান ‘পাহারাদার’ও। শ্যামসুন্দরী পাশের ঘরেই রয়েছেন ভৈরব।
উত্তর কলকাতার এই মন্দির খুব বেশি পুরনো নয়। বরং সদ্য তৈরি হয়েছে। ২০২১-এ এই বাড়িতে প্রতিষ্ঠা হয় কালী মূর্তি। রোজ দূর দূরান্ত থেকে আসেন প্রচুর মানুষ। দু-বেলা ভোগ রান্না হয় শ্যামসুন্দরীর হেঁসেলে। পাত পেড়ে খেয়ে যান মন্দিরে আসা অগনিত ভক্ত।
শ্যামসুন্দরীকে ঘিরে প্রচলিক আছে বহু অলৌকিক কাহিনী।
একটা কাহিনি এই মন্দির ঘিরে প্রচলিত আছে। তা হল, একবার দেবীর পুজোর জন্য পুরোহিত বাজার করতে গিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে এক পাঁচ বছরের বালিকা গায়ে কালো রং, চোখে লাল রং মেখে দেবী কালীর মত সেজে সবার কাছে ভিক্ষা চাইছে। দেবী শ্যামসুন্দরীর পুরোহিতের কাছেও সেই বালিকা ভিক্ষে চেয়েছিল। বলেছিল যে, একটা টাকা দিতে। কারণ, সে দু’দিন ধরে কিছু খায়নি। কিন্তু, পুরোহিতের এসব ভালো লাগেনি। তিনি ওই বালিকাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলেন। পালটা বলেছিলেন, যা কাজ করে খা। জবাবে বালিকাটি বলেছিল, কাজ না-পেয়েই সে ভিক্ষে চাইছে।
কিন্তু, পুরোহিতের এসব মোটেই পছন্দ হয়নি। তিনি ওই বালিকাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। কাজ করে খাওয়ারও পরামর্শ দেন। তবে মেয়েটি জানায় কাজ পায়নি বলেই সে ভিক্ষে চাইছে।
এর পর চলে গিয়েছিল ওই ছোট্ট মেয়েটি। পুরোহিতও দেবীর পুজোর জন্য বাজার করে ফিরে এসেছিলেন মন্দিরে। দেবীর ভোগের ব্যবস্থা হয়েছিল। প্রচুর ভক্তের সমাগমও হয়েছিল অমাবস্যার সে রাতে। নিয়ম মেনে অন্ধকারেই চলছিল দেবীর আরাধনা। পুজো চলাকালীন পুরোহিত হঠাৎ লক্ষ্য করেন যে শুধু মহাদেবই শায়িত রয়েছেন। কিন্তু, তাঁর ওপর কালী নেই। প্রথমে ভ্রম মনে হলেও পরে ঘি-এর প্রদীপ বাড়িয়ে মূর্তি দেখার চেষ্টা করেন এবং একই জিনিস দেখেন। তৎক্ষণাৎ নুপুরের শব্দে সম্বিত ফেরে পুরোহিতের।
শোনা যায় সে দিনই সয়ং শ্যামাসুন্দরী জানান দিয়েছিলেন তাঁর অস্তিত্বের কথা, ফের খেতে চেয়েছিল চালকলা। সকালে ছোট্ট মেয়ে রূপে যে তিনিই খাবার চাইতে এসেছিলেন সে কথাও জানিয়েছিলেন পুরোহিতকে। সেই থেকেই চলছে রীতি। চালকলা দিয়ে শ্যামসুন্দরীর পুজোর আয়োজন হয় আজও।
সাজতে ভালবাসেন শ্যামসুন্দরী’। তাই রোজই রকমারি ফুলের গহনা আর শাড়িতে সাজেন দেবী, নিখুঁত হাতে তাঁকে সাজিয়ে তোলেন পুরোহিতরা। গা ভর্তি সোনা রূপোর গহনায় সজ্জিত হয়ে সিংহাসনে হাস্যমুখে বিরাজমান দেবী। প্রথম ঝলকেই দেখে মনে হয় দেবী যেন হাসছেন।
এখানে পুজোর এক বিশেষত্ব রয়েছে। প্রতি অমাবস্যায় মাত্র একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবীর আরাধনা চলে। ভক্তদের কাছে বহু প্রতিক্ষিত সেই মুহূর্ত। অমাবস্যার অন্ধকারে দেবীর দর্শনে দূর থেকে ছুটে আসেন কত মানুষ। অনেকেই বলেন শ্যামসুন্দরীর উপস্থিতি অনুভব করেছেন তাঁরা। সেবায়েতরাও নিঃশ্বাসের শব্দ পাওয়ার গল্প বলেন। কেউ আবার বলেন নিজেদের বাড়িতেও নাকি মায়ের উপস্থিতি টের পেয়েছেন তাঁরা। সবমিলিয়ে কলকাতার বুকে দেবী শ্যামসুন্দরীর উপস্থিতি প্রকট হয়েছে দিন দিন। ভক্তের বিশ্বাস দেবী সাড়া দেবেন ঠিক। শতকাজের মাঝেও তাই একবার দেবীর দর্শনের জন্য ছুটে আসেন বহু মানুষ।
সংগহীত
আমাদের লেখা পরার জন্য ধন্যবাদ ।