বছর গুরতে না গুরতেই আমাদের সব থেকে বড় উৎসব আসেই গেলো। দুর্গা পুজোর শুরু মহালয়া থেকে। তাই জেনে নেওয়া যাক সর্ব প্রথম মহালয়ার মন্ত্র –
যা চণ্ডী মধুকৈটভাদিদৈত্যদলনী যা মাহিষোন্মূলিনী
যা ধূম্রেক্ষণচণ্ডমুণ্ডমথনী যা রক্তবীজাশনী ।
শক্তিঃ শুম্ভনিশুম্ভদৈত্যদলনী যা সিদ্ধিদাত্রী পরা
সা দেবী নবকোটীমূর্তিসহিতা মাং পাতু বিশ্বেশ্বরী ।।
আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর; ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা; প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা। আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নব ভাবমাধুরীর সঞ্জীবন। তাই আনন্দিতা শ্যামলীমাতৃকার চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে আবাহন। আজ চিৎ-শক্তিরূপিনী বিশ্বজননীর শারদ-স্মৃতিমণ্ডিতা প্রতিমা মন্দিরে মন্দিরে ধ্যানবোধিতা।
সিংহস্থা শশিশেখরা মরকতপ্রখ্যা চতুর্ভির্ভুজৈঃ
শঙ্খং চক্রধনুঃশরাংশ্চ দধতী নেত্রৈস্ত্রিভিঃ শোভিতা ।
আমুক্তাঙ্গদ-হার-কঙ্কণ-রণৎ-কাঞ্চীক্বণন্নূপুরা
দুর্গা দুর্গতিহারিণী ভবতু নো রত্নোল্লসৎকুণ্ডলা ।।
মহামায়া সনাতনী, শক্তিরূপা, গুণময়ী। তিনি এক, তবু প্রকাশ বিভিন্ন— দেবী নারায়ণী, আবার ব্রহ্মশক্তিরূপা ব্রহ্মাণী,
কখনো মহেশ্বেরী রূপে প্রকাশমানা, কখনো বা নির্মলা কৌমারী রূপধারিণী, কখনো মহাবজ্ররূপিণী ঐন্দ্রী, উগ্রা শিবদূতী, নৃমুণ্ডমালিনী চামুণ্ডা, তিনিই আবার তমোময়ী নিয়তি। এই সর্বপ্রকাশমানা মহাশক্তি পরমা প্রকৃতির আবির্ভাব হবে, সপ্তলোক তাই আনন্দমগ্ন।
বাজলো তোমার আলোর বেণু,
বাজলো তোমার আলোর বেণু,
মাতলো যে ভুবন।
আজ প্রভাতে সে সুর শুনে
খুলে দিনু মন।
অন্তরে যা লুকিয়ে রাজে,
অরুণ বীণায় সে সুর বাজে;
এই আনন্দ যজ্ঞে সবার
মধুর আমন্ত্রণ।
আজ সমীরণ আলোয় পাগল
নবীন সুরের বীণায়,
আজ শরতের আকাশবীণায়
গানের মালা বিলায়।
তোমায় হারা জীবন মম,
তোমারি আলোয় নিরুপম।
ভোরের পাখি উঠে গাহি
তোমারি বন্দন।
হে ভগবতী মহামায়া, তুমি ত্রিগুণাত্মিকা;
তুমি রজোগুণে ব্রহ্মার গৃহিণী বাগ্দেবী,
সত্ত্বগুণে বিষ্ণুর পত্নী লক্ষ্মী,
তমোগুণে শিবের বণিতা পার্বতী,
আবার ত্রিগুণাতীত তুরীয়াবস্থায় তুমি অনির্বচনীয়া, অপারমহিমময়ী, পরব্রহ্মমহিষী;
দেবী ঋষি কাত্যায়নের কন্যা কাত্যায়নী,
তিনি কন্যাকুমারী আখ্যাতা দুর্গি,
তিনিই আদিশক্তি আগমপ্রসিদ্ধমূর্তিধারী দুর্গা,
তিনি দাক্ষায়ণী সতী;
দেবী দুর্গা নিজ দেহ সম্ভূত তেজোপ্রভাবে শত্রুদহনকালে অগ্নিবর্ণা, অগ্নিলোচনা।
এই ঊষালগ্নে, হে মহাদেবী, তোমার উদ্বোধনে বাণীর ভক্তিরসপূর্ণ বরণ কমল আলোক শতদল মেলে বিকশিত হোক দিকে-দিগন্তে;
হে অমৃতজ্যোতি, হে মা দুর্গা, তোমার আবির্ভাবে ধরণী হোক প্রাণময়ী।
জাগো! জাগো, জাগো মা!
জাগো, জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী।
অভয়া শক্তি, বলপ্রদায়িনী, তুমি জাগো।
জাগো, তুমি জাগো।
প্রণমি বরদা, অজরা, অতুলা,
বহুবলধারিণী, রিপুদলবারিণী, জাগো মা।
শরন্ময়ী, চণ্ডিকা, শঙ্করী জাগো, জাগো মা।
জাগো অসুর বিনাশিনী, তুমি জাগো।
জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী।
অভয়া শক্তি, বলপ্রদায়িনী, তুমি জাগো।
জাগো, তুমি জাগো।
দেবী চণ্ডিকা সচেতন চিন্ময়ী, তিনি নিত্যা, তাঁর আদি নেই, তাঁর প্রাকৃত মূর্তি নেই, এই বিশ্বের প্রকাশ তাঁর মূর্তি।
নিত্যা হয়েও অসুর পীড়িত দেবতা রক্ষণে তাঁর আবির্ভাব হয়।
দেবীর শাশ্বত অভয়বাণী—
সংগৃহীত