ব্যারাকপুরের তালপুকুর অঞ্চলে গঙ্গার তীরে অবস্থিত এই শ্রী শ্রী শিবশক্তি অন্নপূর্ণা মন্দির। এই ব্যারাকপুর অঞ্চলটি একসময় চানক নামে পরিচিত ছিল, সেজন্য এই মন্দিরটি চানকের মন্দির নামেও পরিচিত।
স্বামী মথুর মোহন বিশ্বাসের ইচ্ছায় ও শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সম্মতিক্রমে দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের আদলে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন রানী রাসমণির ছোট কন্যা জগদম্বা দেবী।
ভবতারিণী মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রায় কুড়ি বছর পরে ১৮৭৫ খ্রীষ্টাব্দের ১২ই এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তির দিন এই মন্দিরের উদ্বোধন হয়।
কথিত আছে মন্দিরের জমি নির্বাচন, ভিত্তিস্থাপন, মন্দির প্রতিষ্ঠা এবং তারপরে ১৮৮২ সালে উল্টোরথের দিন মোট চারবার শ্রীরামকৃষ্ণদেব এই মন্দিরে এসেছিলেন। মন্দিরটি তৈরি করতে সেই সময়ে প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। মন্দির প্রতিষ্ঠার যাবতীয় কাজের তদারকি করেছিলেন তাঁদের পুত্র দ্বারিকানাথ বিশ্বাস।
এই মন্দিরের পূর্ব দিকের প্রবেশদ্বারের ওপরে একটি সিংহমূর্তি স্থাপনা নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সাথে মন্দির কতৃপক্ষের আইনি দ্বন্দে আদালত রায় দিয়েছিলেন যে, সিংহ, বিক্রমের প্রতীক রূপে যে কেউ গ্রহণ করতে পারে।
মন্দিরটির পূর্বদিকের সিংহদুয়ার দিয়ে প্রবেশ করলে দেখা যাবে বেশ খানিকটা উন্মুক্ত প্রাঙ্গনের মাঝখানে
উঁচু ভিতের ওপর বঙ্গীয় স্থাপত্যশৈলী রীতিতে নবরত্ন ধারায় এই মন্দিরটি তৈরি। নবরত্ন অর্থাৎ নয়টি চূড়া বিশিষ্ট এই মন্দিরের প্রতিটি চূড়ায় রয়েছে গোল ধাতব চক্র। দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের মতই এই মন্দিরে টেরাকোটার অলংকরণ করা যায়নি দক্ষ শিল্পীর অভাবে। তবে মন্দিরের কার্নিশে সুনিপুণ পঙ্খের কাজ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মন্দিরটি দক্ষিণমুখী। মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছে শিব অন্নপূর্ণার বিগ্রহ। অন্নপূর্ণার বিগ্রহটি অষ্টধাতুর ও শিবের বিগ্রহটি রূপো দিয়ে তৈরি। অন্নপূর্ণা মূর্তিটিকে বেনারসি শাড়ি পরানো হয় এবং স্বর্নালঙ্কারে ভূষিত করা হয়। মন্দিরে প্রতিদিন দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগে মাছ থাকবেই। বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে যথাসম্ভব জাঁকজমক সহকারে মায়ের পুজো হয়ে থাকে। সেদিন স্বভাবতই ভক্ত সমাগমও বেড়ে যায়।
মল মন্দিরের সামনেই অর্থাৎ দক্ষিণ দিকে অনেকগুলি থামযুক্ত নাটমন্দির। মন্দিরে ওঠার জন্য দক্ষিণ, পশ্চিম এবং উত্তর এই তিন দিকে তিনটি সিঁড়ি আছে। মন্দিরের পশ্চিম দিকে গঙ্গার দিকে দুপাশে উঁচু ভিতের ওপর আটচালা শৈলিতে নির্মিত তিনটি করে মোট ছয়টি শিব মন্দির রয়েছে। যার মাঝখানে রয়েছে একটি তোরণদ্বার যা পেরিয়ে সোজা গঙ্গায় যাওয়া যায়। তবে এই পথটি বন্ধ ছিল। ওখানে চাঁদনি সহ বাঁধানো ঘাট আছে। যেটি রাসমণি ঘাট নামেই পরিচিত। মন্দিরের প্রবেশ পথের কাছেই রাস্তার ওপর একটি দ্বিতল নহবতখানা নজরে পড়বে। যেটি জীর্ণ হয়ে পড়লেও যার অলংকরণ শৈলি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। কাছেই রয়েছে একটি বেশ পুরনো সুদৃশ্য গাড়িবারান্দা সহ পরিত্যক্ত, জীর্ণ দ্বিতল বাড়ি, চারিদিকে আগাছা পরিবৃত হয়ে।হটাৎ দেখে মন্দিরটিকে দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দির বলে মনে হতে পারে। চারিদিকে শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ বিরাজমান।