৬২৩ বছরের ইতিহাস সঙ্গে নিয়ে মাহেশের রথ। পুরীর পর অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাচীন রথ হুগলীর মাহেশের রথ । চৈতন্যদেব মাহেশকে ‘নব নীলাচল’ আখ্যা দেন। । মাহেশের রথের সাথে জড়িয়ে রয়েছে বহু বছরের ইতিহাস। মাহেশের রথের মেলার বর্ণনা রয়েছে সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারানী’ উপন্যাসেও। মাহেশের রথযাত্রা পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম এবং বাংলার প্রাচীনতম ও বৃহত্তম রথযাত্রা।
কথিত চতুর্দশ শতাব্দীতে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক ব্যক্তি পুরীতে তীর্থ করতে যান।
তাঁর ইচ্ছে ছিল জগন্নাথদেবকে ভোগ খাওয়ানোর। কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষ তাতে বাঁধা দেন। মনের দুঃখে ধ্রুবানন্দ অনশন করে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেবেন বলে ঠিক করেন।
অনশনের তৃতীয় দিনে ধ্রুবানন্দ স্বপ্নাদেশ পান বাংলাতে ফিরে গিয়ে হুগলী নদীর ধারে মাহেশ বলে একটা জায়গায় জগন্নাথ মন্দির স্থাপন করার।
আদেশে এও বলা হয় যে ঠিক সময় মত নদীতে ভেসে আসা এক নিম কাঠ পাবেন ধ্রুবানন্দ, সেই কাঠ দিয়ে জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রা’র মুর্তি বানিয়ে নিজে হাতে তাঁদের ভোগ খাওয়াবেন। ধ্রুবানন্দ তাই করেন।
দৈবাদেশ পেয়ে ধ্রুবানন্দ আসলেন মাহেশে। সেই সময় এই অঞ্চল ছিল জঙ্গলাকীর্ণ এবং শ্বাপদ সঙ্কুল। বহুদিন অপেক্ষার পর একদিন ভাগীরথীর তীরে ভেসে এলো এক নিম কাঠ।
সেই থেকে মাহেশে জগন্নাথ মন্দির। এও বলা হয় যে সন্ন্যাস নেওয়ার পর নবদ্বীপ থেকে পুরী যাওয়ার পথে মহাপ্রভু মাহেশে এসেছিলেন।
মাহেশের জগন্নাথ মন্দির দেখে তিনি মুগ্ধ হন ও এই মন্দিরের নামকরণ করেন ‘নব-নীলাচল’।
বর্তমান মন্দিরটি ১৭৫৫ সালে তৈরি করেন কলকাতার নারায়ণ চন্দ্র মল্লিক নামে এক ভক্ত।
বর্তমান রথটি ১৮৮৫ সালে কৃষ্ণরাম বসু নামে এক ভক্ত মার্টিন বার্ন কোম্পানিকে দিয়ে তৈরি করান। রথটি বাংলার নবরত্ন মন্দিরের আদলে তৈরি। উচ্চতায় ৫০ ফুট এবং ওজনে ১২৫ টন। মোট ১২ টা চাকার ওপর দাঁড় করানো।
দূর-দূরান্ত থেকে এখনও বহু মানুষ আসেন। পুলিশের হিসেব অনুযায়ী প্রতি বছর লক্ষাধিক ভক্ত এই রথ দেখতে আসেন।
জগন্নাথ মন্দির থেকে রথ জি টি রোড ধরে দেড় কিলোমিটার পথ পেড়িয়ে পাড়ি দেয় মাসির বাড়ি অর্থাৎ শ্রীরামপুরের গোপীনাথ মন্দির।
এখানের রথের মেলায় পা পড়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণেরও। সেই থেকে এখনও ইতিহাস আগলে রেখেছে মাহেশ।